ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে ‘সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশ’। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন।
সমাবেশ শুরুর আগেই শহীদ মিনার এলাকায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থলে প্রস্তুতির তৎপরতা দেখা যায়। মঞ্চ গোছানো, চেয়ার সাজানোসহ আনুষ্ঠানিক আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের ব্যস্ততায় ধীরে ধীরে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ একটি প্রতিবাদী জমায়েতে রূপ নেয়।
সমাবেশস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা একের পর এক প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগানে স্লোগানে তারা বলেন, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, ভুলের মুখে কথা বলব’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ এবং ‘এক হাদি রক্ত দেবে, লক্ষ হাদিস জন্ম নেবে’। পাশাপাশি শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি তোলেন।
সমাবেশ শুরুর আগে মঞ্চে গান ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। সেখানে শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয় এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরা হয়। গান ও কবিতার মাধ্যমে সহিংস রাজনীতির বিপক্ষে কণ্ঠ তুলে ধরে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চার আহ্বান জানান অংশগ্রহণকারীরা।
সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অনেকেই বলেন, রাজনৈতিক মতপ্রকাশে সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। তারা শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি তোলেন।
আয়োজকরা জানান, এই সমাবেশের মাধ্যমে হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানো এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তুলে ধরা হচ্ছে। তাদের ভাষায়, রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু তা কখনোই সহিংসতায় রূপ নিতে পারে না।
শান্তিপূর্ণভাবে চলমান এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতিবাদী কণ্ঠে ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসানের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান হাদি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন এবং অভ্যুত্থান-অনুপ্রাণিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকার ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি এবং সে লক্ষ্যে নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে আসছিলেন।
এরই মধ্যে গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে করে আসা দুই আততায়ীর একজন চলন্ত রিকশায় থাকা হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ আজ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে বেশ সংকটাপন্ন।
সিএ/এএ


