যুক্তরাষ্ট্র অবৈধভাবে অবস্থানকারী আরও ৩১ বাংলাদেশিকে হ্যান্ডকাফ ও শেকলে বেঁধে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। ফেরত আসা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নোয়াখালীর, পাশাপাশি সিলেট, ফেনী, শরিয়তপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার নাগরিকও রয়েছেন।
৬০ ঘণ্টা ধরে শেকলবন্দি অবস্থায় যাত্রা
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন—প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে তাদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে শেকল পরিয়ে রাখা হয়। ঢাকায় পৌঁছার পর বিমানবন্দরে তাদের শেকল মুক্ত করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। সেই নীতির অংশ হিসেবেই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বহু মানুষকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
চলতি বছরই বিভিন্ন সময়ে চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটে একাধিক দফায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ব্র্যাকের সহায়তা ও ফেরত আসার গল্প
বিমানবন্দরে ব্র্যাক ফেরত কর্মীদের পরিবহন ও জরুরি সহায়তা প্রদান করে।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফরম) শরিফুল হাসান জানান—
ফেরত আসা ৩১ জনের মধ্যে সাতজন বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে ব্রাজিলে গিয়েছিলেন।
সেখান থেকে তারা মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।
পরবর্তীতে বসবাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও আইনি প্রক্রিয়ার পর তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, “নথিপত্রহীন কাউকে ফেরত পাঠানো স্বাভাবিক হলেও এত দীর্ঘ সময় শেকলবন্দি রাখার ঘটনা অমানবিক।”
প্রতারণার শিকার অভিবাসীরা
শরিফুল হাসান আরও জানান—ব্রাজিলে কাজের নামে পাঠানো অনেক কর্মীকেই মানবপাচারচক্র যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ পথে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করছে।
একজন অভিবাসী ৩০–৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করছেন, অথচ ফিরছেন শূন্য হাতে।
তিনি বলেন, “যে এজেন্সি তাদের পাঠিয়েছে এবং অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত—তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।”
পুনরাবৃত্ত ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির ফলে—
২৮ নভেম্বর চার্টার্ড ফ্লাইটে ৩৯ জন,
৮ জুন চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন,
মার্চ–এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন ফ্লাইটে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।
মার্কিন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন করা হয়। আশ্রয় আবেদন ব্যর্থ হলে আইসিই দ্রুত প্রক্রিয়ায় তাদের ফেরত পাঠায়। সাম্প্রতিক সময়ে এ কারণে চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে।


