মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা জোরদার করতে ইউক্রেনের মানবিক উদ্যোগ ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেল বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া লজিস্টিক হাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার, ইউক্রেন ও সুইডেনের দূতাবাস এবং জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে এ সহায়তা গ্রহণ করেছে।
শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) ডব্লিউএফপি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই সূর্যমুখী তেল সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেনে উৎপাদিত এবং এর ক্রয় ও পরিবহনসহ মোট ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের ব্যয় বহন করেছে সুইডেন সরকার। রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় ডব্লিউএফপি ও অন্যান্য মানবিক সংস্থা এই তেল ব্যবহার করবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফিজুর রহমান, রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন কায়েস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. ওলেক্সান্দ্র পলিশচুক, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমোন পার্চমেন্ট এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে শারলে। ফ্রান্সও ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ কর্মসূচির সহযোগী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মোস্তফিজুর রহমান বলেন, “সুইডেন ও ইউক্রেনের এই সহযোগিতা রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এটি মানবিকতা, সহমর্মিতা ও বৈশ্বিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।” রোহিঙ্গা ত্রাণ কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “এই যৌথ উদ্যোগ মানবিকতার ওপর অভিন্ন বিশ্বাসকে তুলে ধরছে, যা বাংলাদেশ, ইউক্রেন, সুইডেন, ফ্রান্স ও ডব্লিউএফপিকে এক প্ল্যাটফর্মে এনেছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহিউদ্দিন কায়েস জানান, “এই সহায়তা কেবল মানবিক উদ্যোগ নয়, বরং রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সংহতির প্রকাশ।” ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. পলিশচুক বলেন, “সুইডেন ও অন্যান্য অংশীদারদের সমর্থন ছাড়া এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও ডব্লিউএফপি’র অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।”
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে বিশ্বকে সচেতন রাখা জরুরি। এই সহায়তা দেখায় আন্তর্জাতিক সংহতি কথার বাইরে গিয়ে বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নিতে পারে।” ডব্লিউএফপি’র সিমোন পার্চমেন্ট বলেন, “ইউক্রেন ও সুইডেনের এই সহায়তা বৈশ্বিক একতার শক্তিশালী উদাহরণ। ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশগুলোকেও এভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।”
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা ডব্লিউএফপির খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে রোহিঙ্গারা ই-ভাউচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মাসে ১২ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করেন। ১৯টি ই-ভাউচার আউটলেট থেকে তারা চাল, ডাল, তাজা শাকসবজি, মাছ, মুরগি এবং স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী নিতে পারেন। এই ব্যবস্থায় স্থানীয় ক্ষুদ্র কৃষক ও উৎপাদকরাও সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন।
সিএ/ইরি


