বিডিআর বিদ্রোহের সময় ৯২১ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল এবং তাদের অনেকের হিসাব এখনও মেলেনি। আন্তর্জাতিক রচনা, গোয়েন্দা তথ্য ও সাক্ষ্যে দেখা গেছে—বিদ্রোহের ফলাফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী দেশ ভারত। এ কারণে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা চাইতে সরকারের প্রতি সুপারিশ করেছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন।
রোববার (৩০ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কমিশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল। দেশকে অস্থিতিশীল করা, শেখ হাসিনার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা এবং সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করতেই এই বিদ্রোহ ঘটানো হয়েছে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, বিদ্রোহের সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার নামও পাওয়া গেছে। এছাড়া বিডিআরের ভেতরে নানা সংকট, ডাল-ভাত কর্মসূচি ও বিডিআর শপ তৈরির কারণে চাপ বাড়া—এসব বিষয়ও বিদ্রোহের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
কমিশনের দাবি, বিদ্রোহের পর পাঁচ সেনা কর্মকর্তাকে গুম করা হয়েছে—এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিদ্রোহ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ছয় সেনা সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়। র্যাব সদস্যরা বিদ্রোহকালে পিলখানার ৫ নম্বর গেটে অবস্থান করলেও কর্নেল রেজা নূরের নির্দেশে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এই বিষয়েও কমিশন সুপারিশ করেছে।
তারা জানায়, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা তার দলবল নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও মন্তব্য করা হয়।
তদন্তে দেখা গেছে, যারা বিদ্রোহের সময় সরকারকে সহযোগিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে সুপারসেডেট সেনা কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি। বিদ্রোহের পর তাদের অনেককে পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে দেওয়া হয়েছে। কমিশনের মতে, দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অংশ হিসেবেই এসব করা হয়েছে।
বিদ্রোহের সময় সেনা অভিযান হলে বাহিনীকে শহরের বাইরে ৩ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে রাখা হতো না বলেও মন্তব্য করে কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে সেনা কর্মকর্তাদের ওপর সংঘটিত নৃশংস নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরা হয়। কারও চোখ তুলে ফেলা, কারও পা ভেঙে দেওয়া, শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা, পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা ও বাসায় লুটপাট—এমন ভয়াবহতা ভুক্তভোগীদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।
সিএ/আরএফ


