রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরপর দুদিন ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দেশ। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার কম্পন কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার সন্নিকটে নরসিংদীর মাধবদী। এই শক্তিশালী কম্পনে শিশুসহ অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়।
শনিবারও (২২ নভেম্বর) সকাল ও সন্ধ্যায় ঢাকায় আরও দুবার কম্পন অনুভূত হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিটের দিকে হওয়া ভূমিকম্পটির মাত্রা সম্পর্কে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেলেও আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় দেশে তিনবার ভূমিকম্প হয়েছে।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশকে তিনটি জোনে ভাগ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। জোন-১ সবচেয়ে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ, জোন-২ মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং জোন-৩ তুলনামূলক নিম্নঝুঁকিপ্রবণ এলাকা।
মানচিত্র অনুযায়ী দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু জেলা জোন-১ এ রয়েছে। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯ জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বড় অংশ উচ্চঝুঁকিপ্রবণ। অন্যদিকে খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালী নিম্নঝুঁকিতে আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির কাছাকাছি অঞ্চল ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বাংলাদেশের চারপাশে পাঁচটি উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত—মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী, নোয়াখালী থেকে সিলেট, সিলেট থেকে ভারতের সীমান্ত, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট। এসব জায়গায় বড় ধরনের ভূকম্পনের সম্ভাবনা বেশি।
১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অন্তত পাঁচ দফা বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে দেশে। এগুলোর বেশিরভাগই সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার এলাকায় উৎপত্তি হয়। ফলে এসব অঞ্চল ভবিষ্যতেও বড় বিপদের মুখোমুখি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় আছে প্রায় ২১ লাখ ভবন। এর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৪ থেকে ৩০ তলা ভবন ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে। বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মাণ হওয়ায় ভবনগুলো ধসে পড়লে বিশাল প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ডা. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, মাত্র ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানী ও আশপাশের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আরও বড় কম্পন হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার এবং স্থাপনা নির্মাণে কঠোর নজরদারির প্রয়োজন।
ভূমিকম্প আগাম পূর্বাভাসের সক্ষমতায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিপুল বিনিয়োগ করছে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশেও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জোরদার করা জরুরি বলে মনে করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।
সিএ/এমআরএফ


