জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য আজ (মঙ্গলবার) রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে পৌঁছাবে। তবে এতে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার কোনো সুপারিশ থাকছে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সনদের বাস্তবায়ন প্রস্তাব আলাদাভাবে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হচ্ছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য, যা মূলত আগের খসড়ারই ভাষাগত সংশোধিত সংস্করণ। এর সঙ্গে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রস্তাব যুক্ত করা হয়নি। কমিশন বলছে, দলগুলোর কাছ থেকে আর কোনো মতামত নেওয়া হবে না এবং এই সংস্করণকেই চূড়ান্ত রূপ ধরা হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “দলগুলো যে বিষয়ে ইতোমধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেটির ভিত্তিতেই তারা সনদে স্বাক্ষর করবে। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল, তাই আগে স্বাক্ষর হওয়াটাই যৌক্তিক।”
এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো খসড়া সংস্করণে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব ছিল, যা চূড়ান্ত সংস্করণেও বহাল রাখা হয়েছে। তবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(ক)—যাতে সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা আছে—বাতিলের প্রস্তাব সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না, যদিও বেশিরভাগ দল এর পক্ষে মত দিয়েছিল।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেহেতু অধিকাংশ দলই ওই অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির পক্ষে, তাই পরবর্তী সংসদ এ সিদ্ধান্ত নেবে।
জুলাই সনদে বিলম্বের কারণ হিসেবে কমিশন জানিয়েছে, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় স্বাক্ষর অনুষ্ঠান পিছিয়ে যায়। কমিশন জানায়, সনদের অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত না করলেও দলগুলোর দাবির পর বিষয়টি নিয়ে আলাদা আলোচনা করা হয়। বেশিরভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে, সনদের বাস্তবায়ন গণভোটের মাধ্যমে হওয়া উচিত। তবে গণভোটের সময় ও কাঠামো নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ কয়েকটি দলের মতবিরোধ থেকেই যায়।
ফলে কমিশন এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ একত্র করে সরকারের কাছে একটি বাস্তবায়ন প্রস্তাবনা জমা দেবে, যা সনদের আনুষ্ঠানিক অংশ হবে না।
১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কমিশন জানিয়েছে, ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট ইতোমধ্যে তাদের স্বাক্ষরকারী প্রতিনিধির নাম জমা দিয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
মনির হায়দার, কমিশনের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (কমিশন বিষয়ক), জানান যে, মূল কপিতে তিনটি অংশ থাকবে—সংস্কারের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, প্রস্তাবের তালিকা এবং অঙ্গীকারনামা। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের জন্য পৃথক কপিও থাকবে, পরে তারা মূল দলিলেও স্বাক্ষর করবেন।
অনুষ্ঠানটি দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে স্বাক্ষর পর্ব শেষ হওয়ার পর বিরতির পর দ্বিতীয় পর্বে প্রজেকশন ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে জুলাই সনদ প্রণয়নের পটভূমি ভিডিও আকারে দেখানো হবে। ইতোমধ্যে সংসদ প্লাজায় মঞ্চ নির্মাণ শুরু হয়েছে।
উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “জুলাই সনদের স্বাক্ষর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন সূচনা। এটি কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের দলিল নয়, বরং সাংস্কৃতিক রূপান্তরেরও সূচক। আমরা চাই, এই অনুষ্ঠানটি এমন এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকুক, যার সাক্ষী হওয়া অংশগ্রহণকারীদের জন্য আজীবনের স্মৃতি হবে।”
সিএ/এমআর


