চট্টগ্রাম নগরে গত সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৬২ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে পথচারীদের। নিহতদের মধ্যে ৩৬৩ জনই ছিলেন পথচারী, যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। পথচারীদের পর সবচেয়ে ঝুঁকিতে ছিলেন দুই ও তিন চাকার যানবাহনের যাত্রী ও চালকেরা। এই শ্রেণির যানবাহন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯৫ জন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) যৌথভাবে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট ২০২৫’-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) নগরের পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এটি পুলিশি তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামে প্রকাশিত তৃতীয় সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে নগরের সার্বিক সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে নগরে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) মো. হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) কর্মসূচির আওতায় প্রতিবেদনটি প্রস্তুত ও প্রকাশে সহায়তা করেছে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংস্থা ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস।
প্রতিবেদনটিতে নগরের ২০টি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে বড়পোল মোড়, অলংকার মোড়, সিইপিজেড গেট, সিটি গেট, নিউমার্কেট বাসস্টপ, কালামিয়া বাজার বাসস্টপ ও সাগরিকা গোলচত্বর। প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, এসব স্থানে দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক যাচাই-বাছাই করে ত্রুটি চিহ্নিত ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে প্রতিবেদনে তথ্যভিত্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পথচারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাত প্রশস্তকরণ, উঁচু জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত নিশ্চিতকরণ, স্পিড হাম্প স্থাপন এবং পথচারী দ্বীপ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইজিআরএস চট্টগ্রামের ইনিশিয়েটিভ কো–অর্ডিনেটর লাবিব তাজওয়ান। মূল তথ্য উপস্থাপন করেন বিআইজিআরএস চট্টগ্রামের সার্ভেইলেন্স কো–অর্ডিনেটর কাজী সাইফুন নেওয়াজ। এ সময় বিআইজিআরএস এনফোর্সমেন্ট কো–অর্ডিনেটর কাজী হেলাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, গবেষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সিএ/এএ


