স্বামী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করলেও সংসারে স্বচ্ছলতা ছিল না। তাই নিজেই কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের সিংসাড়া গ্রামের শাহজাদী বেগম (৩৫)। ইউটিউবে মাশরুম চাষে সফলতার গল্প দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন ছোট উদ্যোগ। এখন তিনি এলাকার অনুকরণীয় নারী উদ্যোক্তা।
প্রথম দিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হলেও আজ শাহজাদীর মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকার মতো। পরিবারের পাশে থেকে দুই সন্তান সামলেই বাড়ির পাশের প্রকল্পে প্রতিদিন ৫–৬ কেজি মাশরুম বাজারজাত করেন তিনি।
১০ হাজার টাকা পুঁজিতে শুরু হয়েছিল যাত্রা
শাহজাদী জানান, আগে হাঁস-মুরগি পালন ও বাড়ির সামনে সবজি চাষ করতেন। তবে তা দিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আসছিল না। একদিন ইউটিউবে মাশরুম চাষের ভিডিও দেখে আগ্রহ জন্মায়। স্বামীর সহায়তায় বগুড়া থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। ইউটিউব দেখে চাষাবাদের পদ্ধতি শেখেন এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শও নেন।
২০২৩ সালে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৫০টি সিলিন্ডারে চাষ শুরু করেন তিনি। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০০। বর্তমানে মাসে ৪০–৪৫ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেন, খরচ বাদ দিয়ে আয় থাকে ২৫–৩০ হাজার টাকা।
উদ্যোক্তা তৈরি করছেন শাহজাদী
নিজের সফলতা দেখে এখন অনেকে তাঁর কাছেই শেখার চেষ্টা করছেন। শাহজাদী বলেন, “যতটুকু জানি, হাতে–কলমে শেখানোর চেষ্টা করি।”
আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, মাশরুম চাষ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত। “আমরা শাহজাদীকে মাশরুম উৎপাদনের সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাঁর দেখাদেখি এলাকাবাসীর মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে।”
তিনি আরও জানান, মাশরুম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে, মানসিক স্বাস্থ্যে ভালো রাখে এবং হৃদ্রোগ ও ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
চাহিদা বেশি, উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা
দেশে মাশরুমের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় সবসময় চাহিদা পূরণ করতে পারেন না বলেই জানান শাহজাদী। তাই ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চাষ করতে চান তিনি।
৩০–৩৪ দিনের মধ্যেই মাশরুম বিক্রির উপযোগী হয়। ২৫–২৭ দিনে সংগ্রহ করে শুকানো হয়। কাঁচা মাশরুম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা এবং শুকনা মাশরুম ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। তাঁর নির্দিষ্ট কয়েকজন ক্রেতার কাছে নিয়মিত সরবরাহ দেন।
আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনায় ব্যয় করছেন তিনি। শাহজাদী বলেন, শীত ও বর্ষা মাশরুম চাষের উপযোগী সময়। তবে গরমে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে তিন–চার মাস চাষাবাদ বন্ধ রাখতে হয়।
সিএ/জেএইচ


