বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনী পরিবেশের সৃষ্টি, অন্যদিকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদির নৃশংস হত্যাকাণ্ড জাতীয় রাজনীতিতে গভীর অস্থিরতার ছায়া ফেলেছে।
ঢাকা-৮ আসনের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাদির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা যখন অনেকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তখনই ১২ ডিসেম্বর পল্টনে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এটি কেবল একজন ব্যক্তির হত্যা নয়, বরং নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল করার একটি সুগভীর চক্রান্ত ছিল। হাদি হত্যার পর গুজব ছড়িয়ে জাতীয় সম্পদ ধ্বংসের চেষ্টা এবং গণমাধ্যম অফিসে হামলা চালিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি এই ষড়যন্ত্রের প্রমাণ হিসেবে সামনে এসেছে।
একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ অপরিহার্য। হাদি হত্যার মতো ঘটনা এবং পরবর্তী সহিংসতা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করছে। বিগত সরকারের দীর্ঘকালীন দলীয়করণ ও পুলিশ বাহিনীর কাঠামোগত দুর্বলতা নির্বাচনী পরিবেশকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমানে সেনাবাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
সেনাবাহিনী শুধু সামরিক শক্তি নয়, এটি চরম বিশৃঙ্খলার সময়ে রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রধান অবলম্বন। হাদি হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর তৎপরতা ইতিবাচক সঙ্কেত দিচ্ছে। ডিএমপি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল, ২১৮ কোটি টাকার সই করা চেক উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রের মূল ধাপ উন্মোচনের কাজ করছে।
বিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব ও নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে তারা পেশাদারিত্ব ও ধৈর্য বজায় রেখে কাজ করছে। ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মানবাধিকার মান্য করে কাজ করছে এবং গত ১৭ মাসে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন বা রাজনৈতিক অনধিকার চর্চার অভিযোগ আন্তর্জাতিকভাবে ওঠেনি। এটি বাংলাদেশের উদীয়মান গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার দিকেও একটি ইতিবাচক সূচক।
সময়ের দাবি হলো হাদি হত্যাকাণ্ডকে নির্বাচন বানচালের সরঞ্জামে পরিণত না হতে দেওয়া এবং বিচারের মাধ্যমে সত্যনিষ্ঠ ও সংস্কারমুখী পথে অগ্রসর হওয়া। সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্থিতিশীল দেশের জন্য সেনাবাহিনী, আধুনিক গোয়েন্দা সংস্থা ও সচেতন জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। সত্যের জয় নিশ্চিত।
সিএ/এএ


