জাকিয়া সুলতানা প্রীতি
শরৎকালের মধ্য দিয়েই শীতের আগমনি বার্তা একটু একটু করে জানান দেয় যে শীত আসছে।
শরৎ এর হাল্কা শিশির ভেজা কুয়াশায় তার প্রমাণ। তাই এখন থেকেই যেহেতু আলতো ভাবেই শীতের আমেজ এসে ভিড় করতে থাকে আমাদের প্রকৃতিতে তাই এখন থেকেই কিভাবে পোষা পাখিকে সুস্থ রাখা যায় তাই নিয়েই লিখেছেন ~ জাকিয়া সুলতানা প্রীতি।
আপনার পাখিটিকে শীতল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে আপনার পোষা পাখিটি যে খাঁচা বা যে রুমে থাকে তার তাপমাত্রা যেন কোনভাবেই ৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না নেমে যায়। এমনকি হঠাৎ করে আসা ঠাণ্ডা বাতাস পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব বিস্তার করে। আর আপনার পোষা পাখিটিকে অসুস্থ করে দিতে পারে। তাই শীতকালে আপনার পোষা পাখিটিকে সুস্থ সবল রফাখতে হলে অবশ্যই তার জন্য উষ্ণ ও আরামদায়ক পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।
গত কয়েক বছরের বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে আমাদের দেশে শীতকালে প্রায়ই শৈত্য প্রবাহ হয়। আর ঠাণ্ডা কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘলা আবহাওয়ার কারনে অনেক সময়ই এক টানা অনেক দিন সূর্যের আলো থেকে আমরা বঞ্চিত হই। যার ফলশ্রুতিতে পোষা পাখিরা খুব সহজেই ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়। পাখির যখন ঠাণ্ডা লাগে তখন তারা পালক ফুলিয়ে এক জায়গায় বসে থাকে, হয় বেশী ঘুমায়, নাহয় নড়াচড়া করে না অথবা খাওয়া দাওয়া কমে যায় অনেক সময় হাঁচি দেয়।
ঠাণ্ডার হাত থেকে পাখিকে সুরক্ষিত রাখতে হলে অবশ্যই নিচের দিক নির্দেশনা গুলো মেনে চলা উচিৎ :
১। পাখির খাঁচা এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন সরাসরি ঠাণ্ডা বাতাস না লাগে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অথবা শৈত্য প্রবাহ চলাকালীন সময়ে ঘরের দরজা জানালা ঠিক ভাবে বন্ধ রাখতে হবে আর যারা বারান্দায় পাখি রাখেন তাদের বারান্দা পলিথিন বা তাবুর কাপড় বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
২। প্রতিদিন পাখির খাঁচা ২/৩ ঘণ্টা এমন ভাবে রোদে রাখতে হবে যাতে খাঁচার এক পাশে রোদ লাগে আর অন্য পাশে ছায়া থাকে।
৩। রাতের বেলা পাখির খাঁচা অবশ্যই মোটা কাপড় বা হালকা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাতাস চলাচলের জন্য কিছু জায়গা থাকে।।
পাখির শীতকালিন সম্পূরক খাবার হতে পারে:
মধু, আদা, তুলসি পাতা, পুদিনা পাতা এবং অপরিশোধিত এপেল সিডার ভিনেগার (Unfiltered ACV)।।
অপরিশোধিত এপেল সিডার ভিনেগার পাখির ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করে এবং পাখির ঠাণ্ডার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
বিশুদ্ধ মধু, তুলসি পাতা এবং টাটকা শাক সবজি ও ফলমূল পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অথবা ঠাণ্ডার চিকিৎসায় তুলসির দ্রবন/শরবত প্রতি ২ সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করা যাবে।
অপরিশোধিত এপেল সিডার ভিনেগার (Bragg Unfiltered ACV) মিছ্রিত পানি প্রতি ২ সপ্তাহে টানা ৩ দিন ( ছোট আকারের পাখির জন্য ৫ মিলি ১ লিটার পানিতে, বড় আকারের পাখির জন্য ১০ মিলি ১ লিটার পানিতে) খেতে দিতে পারেন। আর পাখির শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য সজনে পাতা নিয়মিত খেতে দিন। সজনে পাতায় ভিটামিন , খনিজ পদার্থ , প্রোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্টস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগিক উপাদান বিদ্যমান যা আপনার পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং সহজেই ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হবে না।
শীতকালে পাখির সীডমিক্সে তেল জাতীয় বীজ যেমন তিল/গুজি তিল, সূর্যমুখীর বীজ, ক্যানারি এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
পাখির খাঁচা, খাবারের পাত্র এবং পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং প্রতিদিন পরিষ্কার পাত্রে তাদের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার খেতে দিন। এতে করে আপনার পাখি ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাস এর আক্রমন থেকে সুরক্ষিত, সুস্থ ও সবল থাকবে যার ফলে হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লাগার ভয় কমে যাবে।
আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:
পাখির রেসপিরেটরি সিস্টেম(শ্বাসতন্ত্র) অত্যন্ত সংবেদনশীল। এরা কোনভাবেই ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না। সুতরাং পাখিকে উষ্ণ বা গরম রাখার জন্য কোন ভাবেই আগুন কিংবা কয়লার ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়াও বেশ কিছু হিটার আছে যাতে ননস্টিকি আবরণ না থাকার ফলে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় আবার কিছু গ্যাস বা কেরসিন হিটার আছে যা থেকে এক ধরণের গ্যাস তৈরি হয় এগুলো ও কিন্তু আপনার পাখির জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।কিন্তু এক্ষত্রে কিছু রুম হিটার আছে যা ব্যবহার করা নিরাপদ। তবে তা অবশ্যই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে এবং পাখির খাঁচার থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে।