মুক্তাগাছা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। মুক্তাগাছা মযমনসিংহ জেলার পশ্চিমে অবস্থিত। ময়মনসিংহ শহর থেকে মুক্তাগাছা উপজেলা সদরের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। মুক্তাগাছা মণ্ডার জন্য সুপ্রসিদ্ধ। মুক্তাগাছার এই মন্ডা শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবী খ্যাত। জমিদাররা ঊনবিংশ শতাব্দীতে ময়মনসিংহ শহরের উন্নয়নের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন। তারা নানান সময় নানান প্রাসাদ তৈরী করেন যা আজও টিকে রয়েছে।
মুক্তাগাছার মন্ডা
মুক্তাগাছা উপজেলার উত্তরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও জামালপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে ফুলবাড়িয়া উপজেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলা, পশ্চিমে মধুপুর উপজেলা ও জামালপুর সদর উপজেলা। প্রধান নদীঃ আয়মন, শিবখালী, সুতিয়া, ববিল, হাওদা, বাইহা, খালিয়া, দাবিয়া, চিতল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য বিল। মুক্তাগাছার মোট আয়তনঃ ৩১৪•৭১ বর্গ কিমি। বনভূমি ১২৫২ হেক্টর। মুক্তাগাছার অবস্থান 24.7583°N 90.2667°E । শুমারী অনুযায়ী এখানে ৬৪,০৪৪ টি ঘর আছে।
মুক্তাগাছা থানা সৃষ্টি হয় ১৯৬১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। পৌরসভা ১টি, ওয়ার্ড ৯টি, মহল্লা ২০ টি, ইউনিয়ন ১০টি, মৌজা ২৬১টি, গ্রাম ২৭৩টি। উপজেলা শহর ৯ টি ওয়ার্ড ও ২০ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। আয়তন ৭.২৮ কিমি। পৌরসভা সৃষ্টি ১৮৭৫ সালে। জনসংখ্যা ৩৭০৪৩ যার পুরুষ ৫০.৬৩ শতাংশ এবং মহিলা ৪৯.৩৭ শতাংশ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে ৫০৮৮ জন।মোট জনসংখ্যা ৩,৬৬,৩৯৭ জন (২০০১ সনের আদমশুমারী অনুযায়ী), পুরুষ ১,৮৫,৯০৯ জন, মহিলা ১,৮০,৪৮৮ জন, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলো মিটারে ১,১৬৪ জন, বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩১%।
ইতিহাসঃ
জমিদার আচার্য্য চৌধুরীর বংশ মুক্তাগাছা শহরের গোড়াপত্তন করেন বলে জানা যায়। তারা শহরের গোড়াপত্তন করে এখানেই বসতি স্থাপন করেন। আচার্য্য চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য চৌধুরী ছিলেন বগুড়ার বাসিন্দা। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন নবাবের খুবই আস্থাভাজন। নবাবের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১১৩২ সালে তিনি সেই সময়ের আলাপসিং পরগণার বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমানে মুক্তাগাছা শহরসহ মুক্তাগাছা উপজেলার বেশিরভাগই ছিল আলাপসিং পরগণার অন্তর্ভুক্ত। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নানা কারণে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য চৌধুরীর চার ছেলে রামরাম, হররাম, বিষ্ণুরাম ও শিবরাম বগুড়া থেকে আলাপসিং এসে বসবাসের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বসতি স্থাপনের আগে তারা এ পরগণার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন এবং বর্তমান মুক্তাগাছা এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য মনস্থির করেন। সে সময় আলাপসিং পরগণায় খুব একটা জনবসতি ছিলনা। চারদিকে ছিলো অরণ্য আর জলাভূমি। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্যের চার ছেলে ব্রক্ষ্রপূত্র নদের শাখা নদী আয়মানের তীরবর্তী স্থানে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলেন। তারা যে স্থানে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলেন, সে স্থানটিকে এখনো পর্যন্ত রাজঘাট নামে ডাকা হয়। রাজঘাটে নৌকা ভিড়ানোর পরবর্তী সময়ে এলাকার অধিবাসীগণ সেই সময়ের প্রথা অনুযায়ী জমিদারদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী নজরানা দেন। সেই সময়ে উল্লিখিত স্থানটির নাম ছিল বিনোদবাড়ী। বিনোদবাড়ীর বাসিন্দাগণ ছিল প্রান্তিক চাষী ও জেলে। জমিদারদের যারা নজরানা দিয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে মুক্তারাম কর্মকার নামক এক ব্যক্তি তার নিজের হাতের একটি পিতলের গাছা বা দীপাধার জমিদারদের নজরানা দেন। জমিদারগণ মুক্তারামের মুক্তা এর সাথে গাছা শব্দটি যোগ করে বিনোদবাড়ীর পরিবর্তে জায়গার নামকরণ করেন মুক্তাগাছা। সেই থেকে মুক্তাগাছা নামকরণটি চলে আসছে।
ঐতিহ্য মুক্তাগাছার রাজবাড়ী
শিক্ষার হার ৪৫।৯৩ শতাংশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ সরকারী কলেজ ২টি, ( শহীদ স্মৃতি সরকারী কলেজ,সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজ), বেসরকারী কলেজ ৩টি (মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়, হাজি কাশেম অালী মহিলা কলেজ, গাবতলী কলেজ), উচ্চবিদ্যালয় ৪০টি, মাদ্রাসা ১৮টি, সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় ১০১টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৩টি। প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ রামকিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৩), নগেন্দ্র নারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৭
জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশাসমুহ কৃষি ৪৭•৭১%, কৃষি শ্রমিক ২২•৭৬%, অকৃষি শ্রমিক ২•৮২%, ব্যবসা ৮•৩%, চাকরি ৩•৫৯%, অন্যান্য ১৪•৮২%। প্রথম শ্রেণীর আবাদি জমির মূল্য ০•০১ হেক্টর প্রতি ২৫০০ টাকা। প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, পান, গম, আখ, সরিষা। বিলূপ্ত বা বিলুপ্ত প্রায় ফসলাদি স্থানীয় জাতের কলা, ডাল। প্রধান ফল আখ, কলা, জাম, তরমুজ, আম, কাঁঠাল, নারিকেল। মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০৩টি, গবাদি পশু ২৭টি, হাঁস-মুরগি ৬১টি।
মুক্তাগাছা উপজেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে আয়মন নদী, সিরখালি নদী, সুতিয়া নদী, দেওর নদী, বানার নদী ও থাডোকুড়া নদী
ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ঐতিহ্য মুক্তাগাছার রাজবাড়ী এবং মুক্তাগাছার মন্ডা।