সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজাকে ঘিরে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই সংসদ ভবন এলাকা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিতব্য জানাজায় অংশ নিতে এবং শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ, দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সেখানে জড়ো হন।
জানাজা স্থলে গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালী, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভোলা, বগুড়া, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ভোর ৪টা থেকেই মানুষ আসতে শুরু করেন। অনেকেই কালো ব্যাজ পরে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করেই তারা সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থান নেন।
ফেনী থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, “জিয়াউর রহমানকে চোখের দেখা দেখেছি। তার চলে যাওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। তিনি ছিলেন আমাদের ফেনী তথা সারা বাংলাদেশের গর্ব। তার নেতৃত্ব ছিল এ দেশে স্বর্ণযুগ। তার চলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে উপস্থিত ভোলা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের সেলিম বলেন, “খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর পরই মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে তার জানাজা নামাজ আদায় করার জন্য। তাই রাতেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি।”
জানাজায় অংশ নিতে আসা অনেকেই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদ। তার রাজনৈতিক দর্শন, চিন্তাভাবনা এ প্রজন্মের মানুষের কাছে শিক্ষণীয়। তিনি কখনও কোনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।”
খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “সারাটা জীবন শুধু দেশের ও দেশের মানুষের চিন্তা করেছেন। শেখ হাসিনার এত অত্যাচার নির্যাতন সত্ত্বেও দেশ ছাড়ার কথা একবারও চিন্তা করেননি। তিনি এই বাংলার মুক্তিকামী মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”
জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণের জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে। জানাজায় অংশ নিতে আসা এক নারী বলেন, “বেগম জিয়া ছিলেন গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। একজন নারী হয়ে তিনি বাংলাদেশের জন্য যা করেছেন তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। গতকাল খুব ইচ্ছে ছিল তার জানাজায় অংশ নেওয়ার। তাই আজ ভোরেই বড় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নামাজ পড়তে চলে এলাম।”
দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। জানাজা শেষে বেলা সাড়ে ৩টায় তাকে তার স্বামী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে জিয়াউর রহমানের কবরের আশপাশে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। ডিএমপি জানিয়েছে, খালেদা জিয়াকে বহনকারী কনভয়ের চলাচলের সময় সংশ্লিষ্ট সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, সর্বস্তরের মানুষ যেন তাকে সম্মান জানাতে এবং জানাজায় অংশ নিতে পারেন, সে জন্য সরকারের সব দফতর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত থাকবে।
সিএ/জেএইচ


