দেশের আধুনিক ও শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হলো দেশের সবচেয়ে বড় ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাস ও ইনডোর স্টেডিয়ামজুড়ে শুরু হয় এই বিশাল আয়োজন। এতে অংশ নেয় ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। শিশু ও অভিভাবকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা।
এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় দুটি বিভাগে—প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি একটি বিভাগ এবং সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি আরেকটি বিভাগ। এ বছর মোট ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের ১৪৩টি পুরস্কার দেওয়া হবে। দুই বিভাগের প্রথম পুরস্কার রাখা হয়েছে ৩ লাখ টাকা করে। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ১ লাখ টাকার বিশেষ পুরস্কার। আগামী ২৬ ডিসেম্বর হবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
এ প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন দেশের শিল্প অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিত্বরা—মাস্টার প্রিন্টমেকার মনিরুল ইসলাম, শিল্পী অধ্যাপক আবদুস শাকুর শাহ, শিল্পী ধ্রুব এষ, অভিনেতা ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান।
দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই বৃহৎ ছবি আঁকা প্রতিযোগিতার বিষয় নির্ধারণ করা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’। অংশগ্রহণকারী ছোট্ট শিক্ষার্থীদের আঁচড়ে ক্যানভাসে ফুটে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, স্বাধীনতার আলো আর সমকালীন গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি ও আবেগ।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজকের এই সুশৃঙ্খল আয়োজনের প্রতিটি মুহূর্তেই ছিলো শিল্পচর্চার প্রাণস্পর্শী আবেদন। সকাল থেকেই রং, তুলি এবং আঁকিবুকির উচ্ছ্বাসে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
প্রতিযোগিতার বিষয়ে বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিসুর রহমান (অব.) বলেন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—সব ক্ষেত্রেই দেশের তরুণ প্রজন্ম ছিল অগ্রগামী শক্তি। এই গৌরবময় ইতিহাস শিশু-কিশোরদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে, তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করতেই এই আয়োজন। তিনি আরও বলেন, এই প্রতিযোগিতা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের ব্যক্তিগত পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক ও আধুনিক দক্ষতায় গড়ে তোলা।
অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ও কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হায়দার আলী জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিল্পচর্চাকে এগিয়ে নিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের দূরদৃষ্টি থেকেই এমন বড় আয়োজন সম্ভব হয়েছে। তিনি মনে করেন, শিশুদের শিল্প-সংবেদনশীলতা বাড়লে দেশও এগিয়ে যাবে।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনার ছাপ। জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আমিন নাসির বলেন, “’৭১ আমরা দেখিনি, কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই আমরা নিজের চোখে দেখেছি। সেটিই নিজের মতো করে আঁকব।”
অভিভাবকরাও সন্তানের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতাকে সযত্নে লালন করেছেন। প্রতিভা মুন্নি বলেন, “ওরা ছোট বলে আন্দোলনে থাকতে পারেনি, কিন্তু দেশপ্রেমের তাৎপর্য যেন বুঝতে পারে—তাই এখানে এনেছি। এই আয়োজন সত্যিই চমৎকার।”
অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনা। সকাল থেকেই হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের স্রোতে মুখরিত হয়ে ওঠে রাস্তা। রং-তুলির ছোঁয়ায় তৈরি হয় শিল্পমুকুরের এক অসাধারণ পরিবেশ।
জানা গেছে, এবারের প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে মোট নিবন্ধন করেছে ৯ হাজার ৭০৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অফলাইনে ৫ হাজার ৩৩৭ জন এবং অনলাইনে ৪ হাজার ৩১৭ জন রেজিস্ট্রেশন করেন। প্রথম ক্যাটাগরিতে মোট ৫ হাজার ৮৬৯ জন এবং দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ৩ হাজার ৮৩৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এছাড়াও বিশেষ ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় ৩১৫ জন।
সিএ/এএ


