যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করায় তীব্র চাপে পড়েছে ভারতের রপ্তানি অর্থনীতি। অনেক পণ্যে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়ানোয় মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা দ্রুত কমে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। কিন্তু এখন ভারতের প্রায় অর্ধেক রপ্তানি পণ্য এত ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে যে সেগুলো মার্কিন বাজারে বিক্রি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অভিঘাত পড়ছে শ্রমনির্ভর শিল্প ও কোটি মানুষের জীবিকার ওপর।
শুল্ক বৃদ্ধির পরপরই ঘাটতি রেকর্ড
সেপ্টেম্বর—শুল্ক কার্যকর হওয়ার প্রথম পূর্ণ মাসেই—ভারতের রপ্তানি-আমদানি ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩২.১৫ বিলিয়ন ডলার, যা ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৬.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে হয় ৫.৪ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরেও পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়; আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি কমে ৯ শতাংশ।
শ্রমনির্ভর খাতে ভয়াবহ ধাক্কা
এ সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রমনির্ভর শিল্প—
টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য
রত্ন ও গয়না
জুতা, কার্পেট ও হস্তশিল্প
সামুদ্রিক খাদ্য
এসব খাতে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান। শুল্ক বাড়ায় পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ায় অর্ডার বাতিল হচ্ছে, আয় হারাচ্ছেন শ্রমিকেরা।
কার্পেট ও গয়নায় বিপর্যয়
যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় কার্পেট ও গালিচার সবচেয়ে বড় বাজার (প্রায় ৬০%)। এখানে শুল্ক ২.৯% থেকে বেড়ে ৫২.৯% হওয়ায় মার্কিন ক্রেতারা এখন তুরস্ক, চীন ও এমনকি মিসরের তুর্কি মালিকানাধীন কারখানা থেকে পণ্য কিনছেন।
রত্ন ও গয়নাশিল্পেও একই চিত্র। মুম্বাইয়ের এসইইপিজেড জোন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি সেপ্টেম্বর মাসে আগের বছরের তুলনায় ৭১–৭৬% পর্যন্ত কমে গেছে।
পোশাক খাত কার্যত বাজার হারাচ্ছে
২০২৪–২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি ছিল ১০.৯ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতের মোট পোশাক রপ্তানির ৩৫%। কিন্তু শুল্ক ১৩.৯% থেকে লাফিয়ে ৬৩.৯% হওয়ায় ভারতীয় পোশাক কার্যত মার্কিন বাজার থেকে ছিটকে পড়েছে।
এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়া। পাশাপাশি মেক্সিকো ও সিএএফটিএ-ডিআর দেশগুলো দ্রুত সরবরাহ ও শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে মার্কিন খুচরা বিক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।
সাময়িক কৌশল, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি
শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা আগেই পণ্য পাঠিয়ে রপ্তানি বাড়িয়েছিলেন। ফলে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ১৩% বেড়েছিল। কিন্তু নতুন শুল্ক গোটা বাজারটাই ধসিয়ে দিয়েছে; নতুন অর্ডার প্রায় শূন্য।
সংকট মোকাবিলায় করণীয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রমুখী নির্ভরতা কমিয়ে ভারতের দরকার বহুমুখীকরণ কৌশল—
আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বাজারে জোর দেওয়া
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক টেক্সটাইল–পোশাক সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা
বিশ্বব্যাপী ভ্যালুচেইনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করা
তবে উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি সহজ হবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
শশী থারুর
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, এমপি (ভারত)
সিএ/এএ


