গুমের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়ে পরে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। আজ বুধবার ট্রাইব্যুনাল–১–এ অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় তাঁকে ডেকে পাঠায় আদালত। হাজির হয়ে আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। এ সময় ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের ধমকের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে।
শেখ হাসিনা, সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে আসামি করে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুমের অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানিতে এ ঘটনা ঘটে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের এই বেঞ্চে আরও ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
২৩ নভেম্বর এই মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে জেড আই খান পান্নাকে নিয়োগ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। প্রথমদিকে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরে রেজিস্ট্রারের অফিসে চিঠি দিয়ে জানান, তিনি আর দায়িত্ব পালন করতে চান না। শুনানিতে উপস্থিত না থাকায় আজ আদালত তাঁর অবস্থান জানতে চান এবং তাঁকে হাজির করতে নির্দেশ দেন।
হুইলচেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হওয়ার পর জেড আই খান পান্না জানান, শরীর ভালো নেই এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি মামলা থেকে সরে দাঁড়াতে চান। পাশাপাশি দাবি করেন, শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোয় তাঁর অনুসারী এবং প্রসিকিউশন উভয় দিক থেকেই চাপ ও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। নিজেকে “স্যান্ডউইচ অবস্থায়” পড়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শুনানির সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন—এ যুক্তিতে পান্না মামলা লড়তে না চাওয়া আদালত অবমাননার শামিল। একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের মামলায় দাঁড়াতে আগ্রহী হলেও শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়াতে চান না—এ অবস্থান আদালত কীভাবে দেখবে।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, একজন আইনজীবী ক্লায়েন্টের মতামতের ভিত্তিতে আদালতের আদেশ অমান্য করতে পারেন না। আদালত ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো প্রত্যেকের দায়িত্ব। রাজনৈতিক বক্তব্য আদালতে গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করে বেঞ্চ।
শেষ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনার পর গুমের দুটি মামলায় জেড আই খান পান্নার স্থলে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল। তিনি এর আগেও জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন—যে মামলায় ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিল।


