২০২৫ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছরগুলোর একটি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইতিমধ্যে চলতি বছরও রেকর্ড গরমের তালিকায় উঠে এসেছে, যা বিশ্বকে আরও গভীরভাবে ঠেলে দিচ্ছে জলবায়ু সংকটের দিকে।
জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ তিন বছরের মধ্যে থাকবে। সংস্থার ১৭৬ বছরের তাপমাত্রা রেকর্ড অনুযায়ী, চলতি বছর দ্বিতীয় বা তৃতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণ বছর হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আরও তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রতিটি বছরই ইতিহাসের ১১টি উষ্ণ বছরের মধ্যে পড়বে বলে ধারণা দিয়েছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএমও মহাপরিচালক সেলেস্টে সাওলো বলেছেন, আগামী কয়েক বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রির নিচে এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার কথা ছিল। তবে সেই লক্ষ্য অর্জনে বিশ্ব এখনো ব্যর্থ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১.৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। একই সময়ে মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বেড়েছে ২.৩ শতাংশ, যেখানে ভারতের অবদান সবচেয়ে বেশি, এরপর চীন, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা মানবজাতির জন্য “নৈতিক ব্যর্থতা”। তিনি সতর্ক করেছেন, ১.৫ ডিগ্রির ওপরে উষ্ণতা বৃদ্ধি অর্থনৈতিক ক্ষতি, বৈষম্য ও অপ্রত্যাবর্তনীয় বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এ বছর আর্কটিক অঞ্চলে বরফের বিস্তার ইতিহাসের সর্বনিম্ন এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফের পরিমাণও গড়ের নিচে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে দাবদাহ, দাবানল ও বন্যার মতো জলবায়ুজনিত দুর্যোগে জীবিকা, খাদ্যব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে।
তবে ইতিবাচক দিক হলো, গত কয়েক বছরে অনেক দেশ বহুমুখী দুর্যোগের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমানে এমন ব্যবস্থা চালু রয়েছে ১১৯টি দেশে, যা ২০১৫ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। তবে এখনো বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ দেশে কার্যকর সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
ডব্লিউএমও বলেছে, এই ঘাটতি পূরণে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সিএ/এমআরএফ


