শেরপুর জেলায় গত তিন দিন ধরে চলমান মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় আমন ধানসহ সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসের ঝড়ো হাওয়ায় ধানগাছ ও শাক-সবজির চারা হেলে পড়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টির আগে কেটে ক্ষেতে বিছিয়ে রাখা ধানও নষ্ট হওয়ার পথে। এতে কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দ্রুত সময়ে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলায় ৯৩ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে তুলনামূলকভাবে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ভালো ফলনের আশা ছিল। তবে সম্প্রতি দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে অনেক ক্ষেতের ধান পানি জমে জলাবদ্ধতায় পড়েছে এবং নিচু জমির ধানগাছ সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ঘরে ফসল তোলার আগে অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সদর উপজেলার মধ্যবয়ড়া গ্রামের কৃষক ফকির আলী জানান, “কয়েকদিনের মধ্যেই আমন ধানের কাটা-মাড়াই শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে ধানগাছ হেলে পড়েছে, বিছিয়ে রাখা ধান নষ্ট হচ্ছে এবং জমিতে পানি জমে গেছে। ফসল ঘরে তোলা এখন কঠিন হয়ে গেছে। এতে শ্রমিক খরচও বেড়ে গেছে।”
শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরী গ্রামের কৃষক কবির বলেন, “এই অবস্থায় ধান কেটে নেওয়াও শুকানো সম্ভব হচ্ছে না। ভেজা ধান ঘরে তোলার আগে আরও ক্ষতি হবে। রোদ না উঠলে কৃষকের খরচ ওঠানো কঠিন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রার আবাদও পূরণ হবে না।”
শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও জানিয়েছেন, গত বছরের বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তাদের আমন ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছিল। এবছর আবহাওয়ার অনুকূলতায় ফলন ভালো হলেও অসময়ে হওয়া বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নিচু জমির ফসল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরে শনিবার ও রবিবার যথাক্রমে ১৩৫ মিলিমিটার ও ১০ দশমিক ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগসহ ভারতের সংলগ্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, তিনিসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ক্ষেত সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিকভাবে ৩০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২৫ হেক্টর শাক-সবজি ও আলু আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, বৃষ্টি না হলে ও রোদ উঠলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রণোদনা কর্মসূচি কার্যকর করা হবে।
সিএ/এমআরএফ

                                    
