বহুদিনের জটিল আলোচনা শেষে অবশেষে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ট্যারিফ বা শুল্ক সংক্রান্ত ইস্যুতে বড় অগ্রগতি দেখা দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর এখন সময়ের অপেক্ষা বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যাংক জেপি মর্গানের প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমন এমন তথ্য প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, মার্কিন প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ও সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক ঐতিহাসিক সমঝোতা হলে তা হবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে এক নতুন অধ্যায়।
২১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে দীপাবলি উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সদ্যই টেলিফোনে কথা হয়েছে। মূল আলোচনার বিষয় ছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি কমানো।
এর পরদিন মোদি এক্স (টুইটার)-এ পোস্ট করে জানান, ট্রাম্প তাকে দিওয়ালির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং তিনি আশা করেন, বিশ্বের দুই মহান গণতন্ত্র একসঙ্গে বিশ্বকে ‘আশায় ও আলোয় আলোকিত করবে’।
ভারতের প্রথম সারির অর্থনৈতিক দৈনিক দ্য মিন্ট ২২ অক্টোবর জানায়, পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত তিনটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে—ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০ শতাংশ ট্যারিফ শিগগিরই কমে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে।
সবকিছু ঠিকঠাক চললে মালয়েশিয়ায় আয়োজিত আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী মোদির উপস্থিতিতে দুই দেশের বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা হতে পারে। যদিও ট্রাম্পের উপস্থিতি নিশ্চিত, মোদি সেখানে যোগ দেবেন কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানিই প্রধান ইস্যু
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ট্যারিফের বড় অংশই রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির জন্য ‘জরিমানা’। বাকি অংশটি ভারতের পাল্টা শুল্কের জবাবে আরোপিত।
এই শর্ত শিথিল করতে হলে ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ভারত রাশিয়ার পরিবর্তে তাদের কাছ থেকে তেল কিনুক।
দিওয়ালির অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, “এইমাত্র প্রধানমন্ত্রীর মোদির সঙ্গে কথা হলো, আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। তিনি এখন রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমাবেন। আমরা দুজনেই চাই যুদ্ধ শেষ হোক।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নরম হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা
বহু বছর ধরে চলা আলোচনা শেষে চুক্তির একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কৃষি ও জ্বালানি খাতে কিছু সংবেদনশীল ইস্যু এখনও অমীমাংসিত।
মার্কিন প্রশাসন চায়, ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ খাতে তাদের প্রবেশাধিকারের সুযোগ থাকুক, যা ভারতের মতে কৃষকদের ক্ষতি করতে পারে। তবুও ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নন-জিএম ভুট্টা ও সয়াবিনজাত পণ্য আমদানি বাড়াতে রাজি হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা ভারতের জন্য সুযোগ?
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অজয় কুমার শ্রীবাস্তব বলেন, “চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ এবং ‘রেয়ার আর্থ’ রপ্তানিতে চীনের নিয়ন্ত্রণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র নতুন অংশীদার খুঁজছে, যেখানে ভারতই হতে পারে তাদের নির্ভরযোগ্য বিকল্প।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভারতকে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ ট্যারিফ শ্রেণিতে আনতে পারে—যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫ শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি, তবে ভিয়েতনামের ২০ শতাংশের চেয়ে কম।
সিএ/এমআর


