জাঁকজমকভাবে আয়োজিত হলো বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস। সে উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে বসে ঐতিহ্যবাহী লালন মেলা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা লালনভক্তদের ভিড়ে এবার ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমকও।
গত কয়েকদিন ধরে লালনের আখড়ায় চমকের বেশ কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে দেখা যায় সাদা শাড়িতে লালন ভক্তের বেশে। এতদিন অভিনেত্রী নিজে কিছু না বললেও, এবার প্রথমবারের মতো নিজের লালন মেলা ভ্রমণ নিয়ে প্রকাশ করেছেন একটি চমকপ্রদ ভিডিও।
বৃহস্পতিবার সকালে মজার ছলে একটি পোস্ট দিয়ে চমক লেখেন, “লালনে যারা আমার অনেক ফটো ভিডিও তুলছো, তাদের জন্য বেটার কোয়ালিটির ভিডিও দিচ্ছি একটু পরেই। মোবাইলে এমবি আছে তো নাকি ওয়াইফাই?” এরপরই তিনি ফেসবুকে ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে উঠে এসেছে লোকসংগীত, লালন দর্শন ও আখড়াবাড়ির আবহ।
ভিডিওতে দেখা যায়, চমক সাদা শাড়ি ও রঙিন গামছায় লালনীয় সাজে হাজির হয়েছেন। খোঁপায় গাঁদা ফুল, হাতে নানা বালা, গলায় পুঁতির মালা— সেই সাজের সঙ্গে মানিয়ে হাতে নিয়েছেন একতারা। কখনো বাউলদের আসরে গান গাইছেন, কখনো ভক্তদের সঙ্গে একতারা হাতে বসে আছেন তিনি।
ভিডিওটি শুরু হয় লালনের আখড়াবাড়ির ফটকের সামনে রাতের জটলা থেকে। এরপর দেখা যায় আলোকসজ্জিত মাঠ, বিশাল একতারা ও ডুগডুগির প্রতিকৃতি। লোকশিল্পীরা একতারা বাজিয়ে গান গাইছেন, চমক তাতে মিশে যাচ্ছেন পুরোপুরি।
শেষ অংশে গ্রাফিক্সের মাধ্যমে দেখানো হয় কালীগঙ্গা নদীর তীরে অসুস্থ লালনকে একজন মুসলিম নারীর উদ্ধারের দৃশ্য— লালনের জীবনের অন্যতম লোককথা। ভিডিওতে চমক ইংরেজিতে বলেন, “Do you know that every year a fair is held in Kushtia, which celebrates not just music, but the soul of Bangladesh?”
এর বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “আপনি কি জানেন, কুষ্টিয়ায় প্রতি বছর একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা শুধু সংগীত নয়, বাংলাদেশের আত্মাকে উদযাপন করে।”
চমক আরও বলেন, “Lalon Shah — a saint of Bengal, who taught the world the beauty of freedom and faith beyond religion.”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “হয়তো লালনের আসল রহস্যটাই ছিল তাঁর শ্রেষ্ঠ শিক্ষা— মানুষ ও মানবতার ঊর্ধ্বে কোনো বিভাজন নেই।”
ভিডিওর ক্যাপশনে চমক লেখেন, “সুধীজনেরা, এখানে আমি উপস্থাপন করছি— আমাদের আত্মা ও মাটির সংগীত… আমাদের আধ্যাত্মিক শিকড়… আমাদের লালনকে… বিশ্ববাসীর কাছে।”
তিনি জানান, এটি তাঁর ভ্লগ সিরিজ ‘চমকের সাথে বাংলাদেশকে আবিষ্কার’–এর চতুর্থ পর্ব, যার বিষয় লালন শাহ ও তাঁর দর্শন।
নেটিজেনরা চমকের এই ডকুমেন্টারি স্টাইল ভ্লগকে দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন। কেউ লিখেছেন, “এই যে না হইল আসল চমকের চমৎকার টাইপের কনটেন্ট।”
আরেকজন মন্তব্য করেন, “এই ধরনের কনটেন্টের জন্যই আমি ইন্টারনেট বিল দিতেও রাজি।”
আরেকজন লেখেন, “লালন ফকিরের জীবনকে ইংরেজিতে তুলে ধরায় শ্রদ্ধা।”
সবমিলিয়ে, লালনের দর্শন ও লোকসংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে চমকের এই উদ্যোগকে।
সিএ/এমআর


