দেশের সাম্প্রতিক আন্দোলন ও সামাজিক ইস্যুতে নিয়মিত সোচ্চার থাকা অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন ২০২৩ সালের ১ আগস্টের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গুলি এবং দমন-পীড়নের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার সেই দিনটি তার জীবনের অন্যতম ‘সেরা পাওয়ারফুল মোমেন্ট’ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি আবেগঘন স্ট্যাটাসে তিনি জানান, প্রতিবাদের আগে রাত থেকেই মানসিকভাবে চাপে ছিলেন। আবার একধরনের উত্তেজনাও কাজ করছিল—ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে তা তিনি জানতেন না। সকালবেলা স্নিকার্স পরে বেরিয়ে পড়েন বাসা থেকে, মেয়েকে পরিবারের কাছে রেখে যান। পরিবারকে শুধু জানান, তিনি একটি মিডিয়া ইভেন্টে যাচ্ছেন।
“বাড়ি থেকে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম, তখন কারফিউ চলছিল,” লেখেন বাঁধন। ড্রাইভারকে বলেছিলেন, যদি কিছু ঘটে ভিডিও করে রাখতে। নিকেতন থেকে তিনি দৃশ্যমাধ্যমের সহকর্মীদের সঙ্গে গাড়িতে ব্যানার-মাইক নিয়ে ফার্মগেটের উদ্দেশে রওনা দেন।
সেখানে উপস্থিত হন দেশের বরেণ্য নির্মাতা, অভিনেতা ও সংস্কৃতিকর্মীরা। কিন্তু ফার্মগেট এলাকাটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় পুলিশ প্রতিবাদে বাধা দিতে থাকে। তারা বারবার আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দিতে বলেন এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে সরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
“পুলিশ আমাদের ভয় দেখাচ্ছিল,” উল্লেখ করে বাঁধন জানান, তাদের মধ্যে মামুনুর রশীদ, রাজীব ভাই, মোমেন ভাইরা চেষ্টা করছিলেন পুলিশকে বোঝাতে। শেষ পর্যন্ত আনন্দ সিনেমা হলের সামনে কিছুটা জায়গা ছেড়ে দেয় পুলিশ, সেখানেই শুরু হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ।
বাঁধন লেখেন, “আমার মনে হয়েছিল, সেই মুহূর্তে চুপ করে বসে থাকলে নিজেকেই ক্ষমা করতে পারতাম না।” বৃষ্টিতে ভিজে, ভেজা ব্যানার হাতে রাস্তায় দাঁড়ানো সেই মুহূর্তটিকে তিনি জীবনের এক অনন্য শক্তির অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রতিবাদে উপস্থিত ছিলেন বহু খ্যাতিমান শিল্পী ও নির্মাতা—মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, সিয়াম আহমেদ, মিথিলা, রেদওয়ান রনি, নুহাশ হুমায়ূন, আদনান আল রাজীব, আতিক ভাই, আমরিন মুসা, সুকর্ণ শাহেদ, জাকিয়া বারী মম, আশফাক নিপুন, শ্যামল মাওলা, সাবিলা নূরসহ আরও অনেকে। বৃষ্টির কারণে অনেকেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলেও, আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশে কারও সংকোচ ছিল না।
এই লেখার মধ্য দিয়ে আজমেরী হক বাঁধন জানিয়ে দিলেন—কেবল অভিনয়ের পর্দায় নয়, ন্যায়সংগত আন্দোলনের মাঠেও তিনি একজন দৃপ্ত যোদ্ধা।