Home মতামত স্বাধীনতার উড়াল চিঠি 

স্বাধীনতার উড়াল চিঠি 

0

ইভান আহমেদ রাকিব

শনিবার তুমুল বৃষ্টি আর মেঘের অন্ধকার কেটে রবিবার প্রভাতের আলো ফুটেছে,আধো আলো চারপাশ কুয়াশায় ডুবে আছে।
বেলা নয়টায় সূর্যের এক ছিলতে আলোকরশ্মি জানালার ফাক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করেছে আর তখনি আবির এর চিৎকার আর চিৎকার,নবাবপাড়ের মতি চাচাকে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনারা গুলি করে মেরেছে।

কি অবাক কান্ড!

এই কথা শুনে একটু ভয় হয়েছিলো তবে ভয় অতিক্রম করে গৃহ ছাড়তে তেমন ভয় হয়নি।

বাহিরে পা ফেলতেই গুলির শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেলাম,কাদের চাচা দৌড়ে এসে বললো মরতে দাড়িয়েছিস বেটা?

কাদের চাচার কথায় বাড়িতে ডুকে গেলাম আর বিভিন্ন ভাবনায় ডুবে গেলাম।

হায়নার দল কী চায়?

রাত দুপুর ব্রিটিশ-মেরিনের সেপাহীরা এসে ছাউনি ফেলছে শহরে শহরে।

শহরে তখন তেমন বসতি ছিলোনা। ছিলো সারি সারি ঊধ্বমুখী গাছের ঘন অরন্য।

গ্রামে তখন গভীর উত্তেজনা, লালবাগ সেপাহীরা বিদ্রোহ করতে পারে কিন্তু সেই দিনে ব্রিটিশ-মেরিনের সেনারা শহরে তাঁবু ফেলেছিলো।

শেষ রাতে ব্রিটিশ-মেরিনের আক্রমনে লালবাগ এর মাটি লাল হয়ে উঠে।

মৃত্যুর যন্ত্রনায়  আর্তনাদ করা ছাড়া তেমন কিছু করতে পারেনি লালবাগ সেনারা।

রাত শেষে ভোর হলো। পাখির ডাকে ভোরের শিশির জমে আছে ঠান্ডা ঘাসে।

মাঠে বসে শীতের নরম রোদ গায়ে মাখছে বৃদ্ধ ও শিশুরা একটু যেতেই দেখলাম ১১ জন যুবক কি নিয়ে যেন পরামর্শ করছে তাদের সাথে কথা বলার কৌতুহল জাগলো। শেষে আর যাওয়া হলোনা। তবে তাদের দলনেতার নামটা দূর থেকেই শুনছি মুজিবুর।
মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় উঠতেই দেখলাম স্কুলের ছোট ছেলে-মেয়েরা পরিপাটি হয়ে স্কুল এর উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে কিন্তু তাতে বাধা দিলো পুলিশ,ছেলে-মেয়েরা ভয় পেয়ে ফিরে এলো।

সবাইকে পুলিশ নিষেধ করলেও দেয়ালে হেলান দেওয়া ধূলো মাখা কাপড় পরিধান করা তাছলিমা পাগলের দিকে কেউ ফিরেও তাকালো না,তাছলিমা ও ছিলো ১০ জন মানুষের মতোই সুস্থ। কিন্তু ছেলের মৃত্যু সহজ ভাবে নিতে পারেনি এই মা।

দুপুর ঘনিয়ে এলো, বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।বাড়ির আঙ্গিনায় আসতেই কান্নার আওয়াজ, এগিয়ে দেখলাম আর কেউ নয় আমার মা রক্তে মাখা কাদের চাচার পাশে বসে কাঁদছে। এই দৃশ্য দেখে রক্তের বর্ন হয়ে গেলো আমার চোখ। দৌড়ে চলে গেলাম বালুর মাঠে। সেখানে মানুষের হুড়োহুড়ি চলছে সবাই গৃহ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে যাচ্ছে।

২ দিন পর দেখলাম বালুর মাঠের বস্তি গুলোর ও কোন চিহ্ন নেই একটু এগিয়ে দেখলাম বটমূলে মুজিব সেনারা পরামর্শ করছে, তারা বিদ্রোহ করতে চায়।

আমি ও তাদের সাথে যুক্ত হলাম।

তাদের বিদ্রোহের কথা ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।

তাদের সেনাদের যেন চিনতে পারে সে ব্যবস্থা ও করেছে বুদ্ধমান মুজিব। ছোট কাপড়ের গায়ে চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছে।

এইভাবে কয়েক দিন কাটতে লাগলো এক সময় পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পঁচা লাশ, রক্তে মাখা মাটি, চোখের সামনে বোনকে নির্যাতন সইতে না পেরে প্রতিবাদ মুখি হয়ে মুজিব এর দলে যোগ দিলো।

মুজিব ৭ই মার্চ সকলকে উপস্থিত থাকতে বলেন।

সকলেই উপস্থিত থেকে মুজিবের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু মুজিব কোথায়?

এক সময় পুরো মাঠে চিৎকার শুনে বুজলাম মুজিব উপস্থিত হয়েছে।

মুজিব মঞ্চে উঠেই ঊধ্ব ধ্বনিতে বলতে লাগলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যা আছে তা নিয়েই প্রস্তুত থাকো।

সে থেকেই আমরা স্বাধীনতা অনুভব করি।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version