বামপন্থি সহিংসতার আন্তর্জাতিক ঢেউ মোকাবিলার অংশ হিসেবে জার্মানি, ইতালি ও গ্রিসের চারটি সংগঠনকে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তুতি নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণায় জানানো হয়েছে, সংগঠনগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নজরদারির নীতির ধারাবাহিকতায় এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, জার্মানির ইন্তেফা ওস্ট, ইতালিভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রেভল্যুশনারি ফ্রন্ট এবং গ্রিসের আর্মড প্রোলেটারিয়ান জাস্টিস ও রেভল্যুশনারি ক্লাস সেলফ ডিফেন্স—এই চারটি গোষ্ঠী পশ্চিমা সভ্যতার ভিত্তি দুর্বল করতে নৃশংস হামলা চালিয়ে আসছে বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। তাদের কর্মকাণ্ড এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নজরদারিতে থাকবে।
ঘোষণার ফলে মার্কিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো আর্থিক নজরদারি, বিশেষ তদন্ত ক্ষমতা এবং অন্যান্য আইনি সুবিধা আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী যেসব ব্যক্তি এসব গোষ্ঠীর সমর্থক বা সহানুভূতিশীল হিসেবে বিবেচিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের নজরদারি চালানো সম্ভব হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এসব সংগঠন বিপ্লবী অরাজকতাবাদী ও মার্কসবাদী আদর্শ অনুসরণ করে। তাদের মধ্যে অ্যান্টি-আমেরিকানিজম, অ্যান্টি-ক্যাপিটালিজম এবং অ্যান্টি-খ্রিস্টানিটি প্রবল। তার দাবি, এসব আদর্শ দেশ-বিদেশে সহিংসতার প্ররোচনায় ব্যবহৃত হয়। এই ঘোষণার পর মার্কিন নাগরিকদের জন্য এসব সংগঠন বা তাদের সদস্যদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বেআইনি গণ্য হবে।
তবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, ইন্তেফা কোনো সংগঠন নয়; এর কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ বা কাঠামো নেই। গ্রিসের পিরেয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক মেরি বোসিস জানিয়েছেন, অ্যান্টিফাসিস্ট কর্মীদের সঙ্গে সহিংস উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মিল খোঁজা সম্পূর্ণ ভুল। তার মতে, গ্রিসের ইন্তেফা আন্দোলন কখনো সন্ত্রাসী কৌশল ব্যবহার করেনি এবং তাদের কার্যক্রমে সহিংসতার কোনো প্রমাণও নেই।
তিনি বলেন, ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বক্তব্যে প্রায়শই সহিংস ভাষা দেখা গেলেও ইউরোপের ইন্তেফা কর্মীদের অনলাইন বার্তায় তা পাওয়া যায় না। মার্কিন রাজনীতিতে অতিরিক্ত রক্ষণশীল অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। তার ভাষায়, এটি সম্ভবত বিশ্বের মানুষকে ‘ভালো ডানপন্থি’ ও ‘খারাপ বামপন্থি’ হিসেবে ভাগ করার একটি কৌশল, যা মাঝারি-বাম বা প্রগতিশীলদের প্রতি অন্যায্য আক্রমণ হিসেবেই প্রতীয়মান হয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
সিএ/এমআরএফ


