সৌদি আরবের শ্রমবাজারে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এসেছে। দেশটির সরকার দীর্ঘদিনের বহুল সমালোচিত ‘কাফালা ব্যবস্থা’ আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে। এর ফলে সৌদিতে কর্মরত লাখো প্রবাসী শ্রমিকের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশটির শ্রমনীতি ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কাফালা ব্যবস্থা কয়েক দশক ধরে শুধু সৌদি আরবেই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম ব্যবস্থার একটি প্রধান কাঠামো হিসেবে বিদ্যমান ছিল।
‘কাফালা’ শব্দের অর্থ পৃষ্ঠপোষকতা। এই ব্যবস্থায় বিদেশি শ্রমিকদের কাজ ও বসবাস সম্পূর্ণ নির্ভর করত স্থানীয় নিয়োগকর্তা বা স্পনসরের ওপর। নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চাকরি পরিবর্তন, দেশ ত্যাগ কিংবা অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। ফলে শ্রমিকদের ওপর নিয়োগকর্তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়, যা বহু ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষ করে গৃহকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক এবং নিম্ন আয়ের অভিবাসীরা এই ব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি শোষণের শিকার হতেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে কাফালা ব্যবস্থাকে ‘আধুনিক দাসপ্রথা’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছিল। ২০২২ সালের কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ এশীয় শ্রমিকদের মৃত্যু ও নিপীড়নের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এই ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা আরও জোরালো হয়।
অবশেষে ২০২৫ সালে সৌদি সরকার ঘোষণা দেয়, কাফালা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করা হবে। এর পরিবর্তে চালু হবে একটি নতুন চুক্তিভিত্তিক শ্রমনীতি, যা দেশটির ‘ভিশন ২০৩০’ ও ‘ন্যাশনাল ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রাম’-এর অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হবে। সরকারের লক্ষ্য, শ্রমবাজারকে আরও মানবিক, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে তোলা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নতুন ব্যবস্থার ফলে প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী শ্রমিক সরাসরি উপকৃত হবেন। শ্রমিকরা এখন থেকে চুক্তির মেয়াদ শেষে নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই নতুন চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন। এছাড়া ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দেশে ফেরা, পুনরায় আসা বা স্থায়ীভাবে সৌদি আরব ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়াও সম্ভব হবে—যেখানে নিয়োগকর্তার লিখিত অনুমোদন আর বাধ্যতামূলক নয়।
সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নতুন পরিবর্তন শ্রমিকদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এবং সৌদি আরবকে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে যাবে।
সিএ/এমআর