সৌদি আরবে চলতি বছরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা নতুন রেকর্ড গড়েছে। এক বছরে কার্যকর হওয়া মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মহলে তীব্র উদ্বেগ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন রিপ্রিভের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৩৪৫ জনের রেকর্ড ভেঙেছে সৌদি আরব। রিপ্রিভ একে ‘পর্যবেক্ষণ শুরুর পর থেকে সৌদি আরবের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
সংগঠনটি জানায়, সর্বশেষ মাদকসংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া দুই পাকিস্তানি নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। চলতি বছরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন একজন সাংবাদিক, পাঁচজন নারী এবং এমন দুজন ব্যক্তি, যাদের অপরাধ সংঘটনের সময় তারা নাবালক ছিলেন।
রিপ্রিভের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে কার্যকর হওয়া মোট মৃত্যুদণ্ডের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই অপ্রাণঘাতী মাদকসংক্রান্ত অপরাধের জন্য। জাতিসংঘের মতে, এ ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন বিদেশি নাগরিক, যা মানবাধিকার কর্মীদের মতে সৌদি আরবের তথাকথিত ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধের’ অংশ।
রিপ্রিভের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের মৃত্যুদণ্ডবিষয়ক প্রধান জিদ বাসিউনি বলেন, সৌদি আরব কার্যত সম্পূর্ণ দায়মুক্তির মধ্যে কাজ করছে। তিনি দেশটির বিচার ব্যবস্থায় নির্যাতন ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ আখ্যা দিয়ে একে ‘নিষ্ঠুর ও নির্বিচার দমনপীড়ন’ বলে মন্তব্য করেন।
চলতি বছরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৌদি নাগরিকদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল দেরাজি ও জালাল আল লাব্বাদ নামের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা গ্রেপ্তারের সময় নাবালক ছিলেন এবং ২০১১-১২ সালে শিয়া সংখ্যালঘুদের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে সন্ত্রাসবাদের মামলায় দণ্ডিত হন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, তাদের বিচার ছিল গুরুতরভাবে অন্যায্য।
এ ছাড়া জুন মাসে সাংবাদিক তুর্কি আল জাসেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর ভয়াবহ আঘাত।
মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের আগাম জানানো হয় না, এমনকি মরদেহ হস্তান্তর বা দাফনের স্থান সম্পর্কেও তথ্য দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ বিবিসির প্রশ্নে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দেয়নি। তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সৌদি সরকার দাবি করে, তারা মানবাধিকার রক্ষা করে এবং দেশটির আইন নির্যাতন নিষিদ্ধ করে। চিঠিতে আরও বলা হয়, মৃত্যুদণ্ড কেবলমাত্র সবচেয়ে গুরুতর অপরাধে এবং সব বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই কার্যকর করা হয়।
সূত্র: বিবিসি
সিএ/জেএইচ


