জার্মানির এক প্রকৌশলী বিশ্বের প্রথম হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে নতুন ইতিহাস গড়েছেন মিকায়েলা বেন্টহাউস।
গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড রকেটে মিকায়েলা বেন্টহাউসসহ ছয়জন আরোহী মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করেন। রকেটটি মহাকাশের কথিত সীমানা কারমান লাইনের ঠিক ওপরে পৌঁছায়। প্রায় ১০ মিনিটের এই সাবঅরবিটাল অভিযানে তাঁরা অল্প সময়ের জন্য ওজনহীনতার অভিজ্ঞতাও অর্জন করেন।
মিকায়েলা বেন্টহাউস সাত বছর আগে এক বাইক দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত পান। এর পর থেকেই তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করছেন। তবে দুর্ঘটনার পরও তিনি দমে যাননি। শারীরিক সীমাবদ্ধতার মাঝেও মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন তাঁকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। এই স্বপ্ন বাস্তবসম্মত কি না, তা জানতে তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক অবসরপ্রাপ্ত মহাকাশ প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পরে সেই প্রকৌশলীর সহায়তায় জেফ বেজোস প্রতিষ্ঠিত মহাকাশ পর্যটন সংস্থা ব্লু অরিজিনের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক অভিযানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান তিনি। পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে আসার পর ব্লু অরিজিন প্রকাশিত এক ভিডিওতে মিকায়েলা বলেন, ‘এটি ছিল জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা!’ তিনি আরও বলেন, ‘চারপাশের দৃশ্য এবং ভেসে থাকার বিষয় আমি উপভোগ করেছি। ওপরে ওঠার মুহূর্তগুলোও দারুণ লেগেছে। প্রতিটি ধাপ ছিল অত্যন্ত চমৎকার।’
বর্তমানে মিকায়েলা বেন্টহাউস ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থায় কর্মরত। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর তাঁর উপলব্ধি হয়েছিল—প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথিবী কতটা চ্যালেঞ্জিং। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে।
মহাকাশযানে ওঠার সময় মিকায়েলা নিজেই তাঁর হুইলচেয়ার থেকে বিশেষভাবে তৈরি একটি বেঞ্চ ব্যবহার করে ক্যাপসুলে প্রবেশ করেন। এই অভিযানে সহায়তাকারী স্পেসএক্সের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার হ্যান্স কোনিগসম্যান ফ্লাইট চলাকালে প্রয়োজনে সহায়তা দিতে মিকায়েলার পাশেই আসন নেন।
মিকায়েলা বলেন, ‘আমি অনলাইনে হ্যান্সের সঙ্গে পরিচিত হই। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম—আপনি দীর্ঘদিন স্পেসএক্সে কাজ করেছেন। আপনার কি মনে হয়, আমার মতো মানুষেরা মহাকাশচারী হতে পারবে?’
হ্যান্স কোনিগসম্যান বলেন, ‘মিকায়েলা মূলত আমাকে ওই অভিযানে সহায়তা করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর ইচ্ছাশক্তি দেখে মনে হয়েছে, আমারও এটা করা উচিত।’
ব্লু অরিজিন জানিয়েছে, মিকায়েলার ক্যাপসুলে প্রবেশ ও বের হওয়ার সুবিধার্থে বিশেষ গ্রাউন্ড সাপোর্ট সরঞ্জাম যুক্ত করা হয়েছিল। নিউ শেপার্ডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিল জয়েস বলেন, ‘মিকায়েলার এ অভিযান বিশেষভাবে অর্থবহ। এটি প্রমাণ করে যে মহাকাশ সবার জন্য। তাঁর এ স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে পেরে আমরা গর্বিত।’
সিএ/জেএইচ


