রোববার (৭ ডিসেম্বর) মাত্র ১৮ বছর বয়সেই লামিনে ইয়ামাল এখন বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে পরিচিত। শুধু ক্লাব পর্যায়েই নয়, স্পেন জাতীয় দলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হিসেবেও তাঁকে দেখা হচ্ছে। তবে ইয়ামালের পাশাপাশি লা মাসিয়া একাডেমিতে আরও অনেক প্রতিভা গড়ে উঠছে, যাঁরা ধীরে ধীরে আলোচনায় আসছেন। তাঁদের মধ্যেই একজন ১৭ বছর বয়সী দ্রো ফার্নান্দেজ।
বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিকের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন এই কিশোর মিডফিল্ডার। একই সঙ্গে ইউরোপের বাইরে, বিশেষ করে এশিয়ার এক প্রান্তের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ও জয় করে নিয়েছেন তিনি। লা মাসিয়ায় বেড়ে ওঠা দ্রো এখন শুধু বার্সেলোনার ভবিষ্যৎ নয়, ফিলিপাইনের ফুটবলপ্রেমীদের কাছেও নতুন আশার নাম।

দ্রোর পুরো নাম পেদ্রো ফার্নান্দেজ সার্মিয়েন্তো। শুরুতে বার্সেলোনার পরিকল্পনা ছিল তাঁকে চতুর্থ বিভাগের দল বার্সা অ্যাতলেতিক-এ খেলিয়ে আরও প্রস্তুত করা। কিন্তু প্রাক্-মৌসুমে এশিয়া সফরে বার্সেলোনার সঙ্গে গিয়ে তিনি বদলে দেন সব হিসাব। জাপানের ক্লাব ভিসেল কোবের বিপক্ষে বদলি হিসেবে নামার মাত্র ৯ মিনিটের মধ্যেই বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক গোল করে কোচ ফ্লিকসহ সবাইকে চমকে দেন তিনি।

সেই পারফরম্যান্সের পরই দ্রোর লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে অভিষেক ঘটে। বয়স কম হলেও বড় ম্যাচে তাঁকে খেলাতে ফ্লিকের কোনো দ্বিধা নেই। লিগে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে একাদশে শুরু করেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে ৬-০ জয়ের ম্যাচে সতীর্থ ফেরমিন লোপেজকে দিয়ে গোল করানোর ক্ষেত্রেও ছিল তাঁর অবদান। এ নিয়ে ফ্লিক বলেছেন, ‘ও দারুণ এক খেলোয়াড়, দিন দিন আরও ধারালো হচ্ছে।’
দ্রোর উত্থান সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে ফিলিপাইনে। তাঁর মা ফিলিপিনো হওয়ায় দেশটির মানুষ বার্সেলোনার প্রতিটি ম্যাচে নজর রাখছেন, দ্রো দলে আছেন কি না কিংবা বদলি হিসেবে নামছেন কি না। প্রায় এক শতাব্দী আগে ফিলিপাইন ও স্পেন—দুই দেশের হয়েই খেলেছিলেন পাওলিনো আলকান্তারা, যিনি বার্সেলোনার হয়ে জিতেছিলেন ১০টি কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপ। এখন ফিলিপাইনের সমর্থকেরা দ্রোর মাঝে সেই কিংবদন্তির ছায়া দেখছেন।
হোয়ান গ্যাম্পার সেন্টারের স্কাউটদের মতে, দ্রোর ড্রিবলিং এবং ওয়ান-টু-ওয়ান পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষকে কাটিয়ে ওঠার দক্ষতা চোখে পড়ার মতো। ছোটবেলায় ফুটসাল খেলার অভিজ্ঞতার কারণে বলের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ খুব ভালো। তবে বয়সের কারণে শারীরিক শক্তি ও ফিনিশিংয়ে উন্নতির জায়গা আছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ইয়ুথ লিগ জেতা এই কিশোর এত দ্রুত মূল দলে জায়গা করে নেবেন, তা নিজেও ভাবেননি। তাঁর প্রথম কোচ লুইস পেরেজ স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘শুরুতে ও খুব লাজুক ছিল। বড়দের সঙ্গে খেলতে নামলে প্রথমে খুঁজেই পাওয়া যেত না, কিন্তু একবার বল পায়ে পেলে ওর ওপর থেকে চোখ ফেরানো যায় না!’

মাঝমাঠে নাম্বার এইট হিসেবে খেলতে পারলেও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বা উইঙ্গার হিসেবেও স্বচ্ছন্দ দ্রো। তাঁর নিজের পছন্দ উইং পজিশন, যেখানে বেশি স্বাধীনতা পান বলে মনে করেন। অনেকেই ইতিমধ্যে তাঁকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে দ্রোর আদর্শ পেদ্রি, যাঁর ফুটবল–বুদ্ধিমত্তা তাঁকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে।
স্পেনের বয়সভিত্তিক সব দলে খেললেও ফিলিপাইনের সমর্থকেরা এখনো আশা ছাড়ছেন না, একদিন দ্রো তাঁদের জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন। যদিও সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে লা মাসিয়া থেকে মূল দলে তাঁর দ্রুত উত্থান দেখে মনে করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই স্পেনের জাতীয় দলের দরজাও তাঁর জন্য খুলে যেতে পারে। ফিলিপাইনের ফুটবলপ্রেমীরা তখনও তাঁকে নিয়ে গর্ব করতেই থাকবেন।
সিএ/বিই


