এক সময় গোল করে দর্শকের সামনে নাচতেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। এখন গোল নেই, নাচও নেই। আছে শুধু দর্শকদের দুয়ো। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে সেই দৃশ্যই দেখা গেছে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচে।
ম্যাচের ৮৩ মিনিটে সেভিয়ার বিপক্ষে মাঠ ছাড়েন ভিনিসিয়ুস। তাঁর জায়গায় নামেন গঞ্জালো গার্সিয়া। ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার বেঞ্চে ফেরার সময় বার্নাব্যুর গ্যালারি থেকে দুয়োধ্বনিতে ভরে ওঠে। যদিও ম্যাচটি রিয়াল মাদ্রিদ ২-০ গোলে জিতেছে, তবু ওই মুহূর্ত নিয়েই চলছে সবচেয়ে বেশি আলোচনা। যে ভিনিসিয়ুসের সামান্য ড্রিবলিংয়েও একসময় মোহগ্রস্ত হতেন সমর্থকেরা, তাঁরাই এখন বিরক্ত। মূল কারণ, গোলের খরা।
সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে রিয়াল কোচ জাবি আলোনসোও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সমর্থকেরা স্বাধীন এবং নিজেদের মতামত দিতে পারেন।’ ভিনিসিয়ুসের পায়ে গোল না থাকায় সময়টা যে ভালো যাচ্ছে না, সেটাও মানছেন কোচ। বড়দিনের বিরতির পর মাঠে ফিরে তিনি গোলের ধারায় ফিরতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার।
পরিসংখ্যান বলছে, ভিনিসিয়ুসের গোলখরা বেশ দীর্ঘ। রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিল জাতীয় দল মিলিয়ে সর্বশেষ ১৭ ম্যাচে গোল পাননি তিনি। এর মধ্যে রিয়ালের হয়ে ১৪ ম্যাচ এবং ব্রাজিলের হয়ে ৩ ম্যাচ। সর্বশেষ গোল করেছিলেন ১০ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে। ক্লাব ফুটবলে তাঁর শেষ গোল ৪ অক্টোবর ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে। আজ সেই হিসেবে রিয়ালের জার্সিতে গোলহীন ৮১ দিন পার করতে চলেছেন তিনি। এই সময়ে রিয়ালের হয়ে মাঠে ছিলেন ১১১৬ মিনিট এবং দুই দল মিলিয়ে ১৩৩৪ মিনিট গোলশূন্য থেকেছেন।
চলতি মৌসুমে ভিনিসিয়ুস খেলেছেন ২৪ ম্যাচ। গোল করেছেন মাত্র ৫টি। এর মধ্যে ৪টি এসেছে ওপেন প্লে থেকে, একটি পেনাল্টি থেকে। এই মৌসুমে তাঁর গোলের গড় দাঁড়িয়েছে প্রতি ৩৫৬ মিনিটে একটি। আগের দুই মৌসুমের সঙ্গে তুলনা করলে পার্থক্য চোখে পড়ে। গত মৌসুমে তিনি প্রতি ২১০ মিনিটে একটি করে গোল করেন, তার আগের মৌসুমে এই হার ছিল প্রতি ১২৮ মিনিটে একটি।
মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে গোলের এই বড় পতন প্রশ্ন তুলছে তাঁর ফর্ম নিয়ে। রিয়ালের মূল দলে যোগ দেওয়ার পর চলতি মৌসুমে মিনিটের হিসাবে এটি ভিনিসিয়ুসের তৃতীয় সর্বোচ্চ বাজে গোলের হার। ২০১৮-১৯ মৌসুমে মূল দলে সুযোগ পেলেও তখন ‘বি’ দলেও খেলেছিলেন বলে সে মৌসুমের পরিসংখ্যান ধরা হয় না। ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে ৫ গোল করে তাঁর গড় ছিল প্রতি ৩৬৩ মিনিটে একটি। সবচেয়ে বাজে সময় আসে ২০২০-২১ মৌসুমে, যখন ৪৯ ম্যাচে মাত্র ৬ গোল করেছিলেন, অর্থাৎ প্রতি ৪৫৩ মিনিটে একটি।

ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে ভিনিসিয়ুস এ বছর রিয়ালের হয়ে ১৩ গোল করেছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে এসেছে ৫টি। অর্থাৎ বছরের প্রথম ২৫ শতাংশ সময়েই এসেছে তাঁর মোট গোলের ৩৮ শতাংশ। কোনো হ্যাটট্রিক নেই, জোড়া গোল করেছেন দুটি ম্যাচে। এ মৌসুমে রিয়ালের মোট ৫২ গোলের মধ্যে ভিনির অবদান মাত্র ৯ শতাংশ।
এই গোলখরার পেছনে আরেকটি প্রেক্ষাপটও আলোচনায়। গত বছর ২৮ অক্টোবর প্যারিসে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে রদ্রির কাছে হেরে দ্বিতীয় হন ভিনিসিয়ুস। তখন তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে ফেরার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৭ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা মাত্র ১৯।

এখান থেকে ভিনিসিয়ুস ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। কিছুদিন আগে কোচ জাবি আলোনসোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ছড়ালেও স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে সমর্থকদের দুয়ো ও ধারাবাহিক গোলখরার সুযোগ নিতে ইউরোপের কয়েকটি ক্লাব নাকি অপেক্ষায় আছে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কার খবর অনুযায়ী, ভিনিসিয়ুসকে দলে নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে কিছু ক্লাব। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তাঁর বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে।
সিএ/বিই


