শেষের পথে আরেকটি বছর—২০২৫। বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এই বছরটি ছিল নাটক, উত্তেজনা, আশা ও আক্ষেপের মিশেলে ভরপুর। প্রবাসী ফুটবলারের আগমন, স্টেডিয়ামে দর্শকের প্রত্যাবর্তন, নারী ফুটবলে বিদ্রোহ, আবার একই সঙ্গে প্রথমবার এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন—সব মিলিয়ে বছরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল দেশের ফুটবল।
প্রবাসী ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তি জাতীয় দলে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। হামজা চৌধুরীর পথ ধরে জাতীয় দলে যোগ দেন ফাহামিদুল ইসলাম, শমিত সোম ও জায়ান আহমেদ। ইংল্যান্ডের ফুটবলে খেলা হামজা বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছেন ৭ ম্যাচ, গোল করেছেন ৪টি। তাঁকে ঘিরে দর্শক-সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হয় ব্যাপক উন্মাদনা। কানাডার জাতীয় দলে খেলা শমিত সোম এবং ইতালিতে বেড়ে ওঠা ফাহামিদুল ইসলামের আগমনও ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা জাগিয়েছে।
তবে প্রত্যাশার পূর্ণতা আসেনি পুরুষ জাতীয় দলের ক্ষেত্রে। ৪৫ বছর পর এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম চার ম্যাচে দুই ড্র ও দুই হার নিয়ে পিছিয়ে পড়ে দল। পঞ্চম ম্যাচে জয় এলেও সেটি যথেষ্ট হয়নি। তবে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে শেখ মোরছালিনের গোলে পাওয়া ১–০ ব্যবধানের জয়টি ছিল বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত। এই জয়ে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
নারী ফুটবলে ২০২৫ সাল ছিল একই সঙ্গে অম্ল ও মধুর। বছরের শুরুতেই কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে ১৮ নারী ফুটবলারের বিদ্রোহ দেশের ফুটবলে নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে ওঠে। বিদ্রোহের পর সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভীন, সুমাইয়া ও কৃষ্ণাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়কে দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কোচ। সেই বিতর্কের মধ্যেই ইতিহাস গড়ে নারী জাতীয় দল।
দুবার সাফজয়ী মেয়েরা প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠে। ঋতুপর্ণার জোড়া গোলে শক্তিশালী মিয়ানমারকে হারিয়ে পাওয়া জয়টি হয়ে থাকে স্মরণীয়। একই বছরে অনূর্ধ্ব–২০ নারী দলও প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব–২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। জুলাই মাসে নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের পথে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মোসাম্মৎ সাগরিকা।
ঘরোয়া ফুটবলেও এসেছে কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সংস্কার হওয়া জাতীয় স্টেডিয়ামে চার বছর পর ফিরেছে ফুটবল। দেশের শীর্ষ লিগে ২৩ বছর পর শিরোপা জেতে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। যদিও শিরোপার হাতবদল হলেও ঘরোয়া ফুটবলে গুণগত পরিবর্তনের অভাব এবং তৃণমূল ফুটবলের অবহেলা বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল।
সিএ/জেএইচ


