পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ হঠাৎ কেঁপে ওঠা বা বড় ধরনের ঝাঁকুনিকে ভূমিকম্প বলা হয়। বিজ্ঞান বলছে, ভূ-অভ্যন্তরের শিলাস্তরে পরিবর্তন ও সংঘর্ষের কারণে ভূমি কম্পন হয়। আর এতে মানুষ ভয়-আতঙ্কে দিকবিদিক ছুটে বেড়ায় এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে নিরাপত্তা কামনা করে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণে, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের পরীক্ষা এবং পাপাচার থেকে ফিরে আসার সতর্কবার্তা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন— মানুষের কৃতকর্মের ফলেই স্থল-সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যাতে তারা নিজেদের ভুল বুঝে ফিরে আসে। (সুরা আর-রুম, আয়াত: ৪১)
কিয়ামতের ভয়াবহতার তুলনায় দুনিয়ার দুর্যোগ সামান্য। ভূমিকম্পের সময় মানুষ যতটা আতঙ্কে পড়ে, কিয়ামতের দৃশ্য হবে তার চেয়েও বিভীষিকাময়। আল্লাহ তায়ালা বলেন— কিয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে ভয়ংকর। সে দিন মায়েরা সন্তান ভুলে যাবে, গর্ভবতীরা গর্ভপাত করবে আর মানুষ নেশাগ্রস্ত মনে হবে; অথচ তা হবে আল্লাহর কঠিন শাস্তির ভয়ে। (সুরা হজ, আয়াত: ১-২)
সুরা যিলজালে বলা হয়েছে— যখন জমিন প্রবলভাবে কেঁপে উঠবে এবং তার ভেতরের সবকিছু বের করে দেবে, তখন মানুষ বলবে— এর কী হলো? সেদিন জমিন মানুষকে তাদের কাজের খবর জানিয়ে দেবে। (সুরা যিলজাল: ১-৬)
আরও বলা হয়েছে— ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করল এবং তারা নিজ ঘরেই উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (সুরা আরাফ: ৭৮) আবার সুরা ওয়াকিয়ায় আল্লাহ জানান, প্রবল প্রকম্পনে পর্বতগুলোও চূর্ণ হয়ে বিক্ষিপ্ত ধুলায় পরিণত হবে। (সুরা ওয়াকিয়া: ৪-৬)
হাদিসে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা এসেছে। রাসুল (সা.) বলেন— অবৈধ সম্পদ অর্জন, খেয়ানত, জাকাতকে জরিমানা মনে করা, ধর্মীয় শিক্ষা উপেক্ষা করা, মায়ের প্রতি অবজ্ঞা, মসজিদে শোরগোল, অসৎ ব্যক্তিদের নেতৃত্ব— এসব বাড়তে থাকলে প্রবল ঝড় ও ভূমিকম্প দেখা দেবে, ভূমি তলিয়ে যাবে। (তিরমিজি, হাদিস: ১৪৪৭)
আরেক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন— গায়িকা, বাদ্যযন্ত্রের প্রসার ও মদপানের সয়লাব হলে এ উম্মতে ভূমিকম্প, বিকৃতি ও পাথরবর্ষণ নেমে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ২২১২)
পরিশেষে— ইসলামের আলোকে ভূমিকম্প মানুষের জন্য সতর্কবার্তা, যাতে তারা পাপাচার ছেড়ে সৎপথে ফিরে আসে এবং মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয়।
সিএ/এমআরএফ


