দাম্পত্য জীবন ভালোবাসা, আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার বন্ধনে গঠিত হলেও কিছু ছোট ভুল বা অভ্যাস সেই সম্পর্কের ভিত্তি নষ্ট করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় অস্থির মেজাজ, অযথা তর্ক, অকৃতজ্ঞতা, গোপনীয়তা ফাঁস বা ঈর্ষা দাম্পত্য জীবনে দূরত্ব সৃষ্টি করে, যা শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদে রূপ নেয়।
অযথা অভিযোগ ও অকৃতজ্ঞতা
স্বামীর আয়ের পরিমাণ নিয়ে ক্রমাগত অভিযোগ করা বা তার জীবিকা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে স্ত্রীর উচিত স্বামীর উপার্জনে সন্তুষ্ট থাকা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমি জাহান্নামে গিয়ে দেখলাম, অধিকাংশ নারীই সেখানে থাকবে।’ কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ।’ তাই স্বামীর দুর্বলতা নয়, তার গুণগুলো স্মরণ করে সম্পর্কটিকে দৃঢ় করা উচিত।
গোপনীয়তা রক্ষা না করা
দাম্পত্য জীবনের গোপন কথা বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করা বিশ্বাস ভঙ্গের শামিল। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সৎ স্ত্রীগণ স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাদের মর্যাদা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সেরা নারী সে, যাকে দেখে স্বামী আনন্দিত হয়; আদেশ দিলে মান্য করে; আর তার অনুপস্থিতিতে নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ রক্ষা করে।’
স্বামীর প্রতি সম্মান ও ইতিবাচক মনোভাব
স্বামীকে অবমূল্যায়ন করা, তুলনা করা বা আবেগহীনতার অভিযোগ তোলা সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ায়। বরং সামান্য কাজের প্রশংসা করা, উৎসাহ দেওয়া ও মূল্যায়ন করা সম্পর্কের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনে। স্বামীকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা না করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে ভালোবাসা গভীর হয়।
অযথা তর্ক ও উচ্চস্বরে কথা বলা
দাম্পত্য সম্পর্কে শান্ত সংলাপই সমাধানের চাবিকাঠি। উচ্চস্বরে কথা বলা বা তর্কে লিপ্ত হওয়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে। মতবিরোধ হলে নরম স্বরে বোঝানো উচিত, বিশেষত সন্তানদের সামনে কখনো বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়।
বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলানো
যেমন, স্বামী দেরি করে এলে অভিযোগ না করে বলুন, আপনি উদ্বিগ্ন ছিলেন বা তাকে মিস করেছেন। এতে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। স্বামীর ছোটখাটো ভুল ধরার চেষ্টা না করে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামলানোই শ্রেয়।
দাম্পত্য অধিকারে অবহেলা
দাম্পত্য সম্পর্কে শারীরিক ও মানসিক সংযোগ রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে স্ত্রী স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তাকে রাগান্বিত অবস্থায় ঘুমাতে দেয়, ফেরেশতারা তাকে সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দেয়।’ (বুখারি)।
ঈর্ষা ও সন্দেহ
অতিরিক্ত সন্দেহ বা হিংসা সম্পর্কের বিষ। স্বামীর ফোন দেখা, তার ওপর অযথা নজরদারি করা বা শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের প্রতি ঈর্ষা প্রকাশ দাম্পত্যে বিভাজন আনে।
বিচ্ছেদের চিন্তা থেকে বিরত থাকা
কোনো কারণ ছাড়াই তালাক চাওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী বিনা কারণে স্বামীর কাছ থেকে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম।’ তাই সম্পর্কের টানাপোড়েন মিটিয়ে বোঝাপড়ার মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনা উচিত। বিশেষত সন্তান থাকলে বিচ্ছেদ শুধু দম্পতিকে নয়, পুরো পরিবারকেই আঘাত করে।
সূত্র : ইসলাম ওয়েব ডট নেট
সিএ/এমআরএফ


