সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া জীবনধারা, প্রযুক্তিনির্ভরতা ও সামাজিক টানাপোড়েনের কারণে তরুণ প্রজন্ম নানা ধরনের আসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মাদক, অনলাইন গেম, অতিরিক্ত কেনাকাটা বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মভিত্তিক নেশাসহ এসব আসক্তি তাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণদের এসব আসক্তির পেছনে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক—এই তিন ধরনের কারণ প্রধান ভূমিকা রাখে। ব্যক্তিগত দুর্বলতা, অনিয়ন্ত্রিত কৌতূহল, বাড়তি অবসর সময়ের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে যোগ হয় সামাজিক পরিবেশ, অসৎ সঙ্গ, আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ভুল ধারণা। এ ছাড়া পারিবারিক অশান্তি, যোগাযোগের অভাব ও কঠোর আচরণও অনেক তরুণকে ভুল পথে ঠেলে দেয়।
নিচে তরুণদের আসক্তির সবচেয়ে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ সাতটি কারণ তুলে ধরা হলো—
১. খারাপ সঙ্গের প্রভাব
কৈশোরে বন্ধুবান্ধবই সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। কোনো বন্ধুর নেশা বা ক্ষতিকর অভ্যাস বাকি বন্ধুদেরও সেই দিকে টেনে নেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সঙ্গীর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— ভালো সঙ্গী যেমন উপকার করে, তেমনি খারাপ সঙ্গী ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
২. অদম্য কৌতূহল ও নতুন কিছু করার লোভ
তরুণ বয়সে কৌতূহল স্বাভাবিক। তবে অপরিপক্বতা ও ঝুঁকির পরিণতি না বোঝার কারণে অনেকেই ভুল পথে পা বাড়ায়। পরিবারের সদস্যদের উচিত সন্তান কী করছে সে বিষয়ে নজর রাখা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ দেখলে শুরুতেই সতর্ক করা।
৩. পারিবারিক অশান্তি
পরিবার হলো ব্যক্তিত্ব গঠনের ভিত্তি। ঘন ঘন কলহ, বাবা–মায়ের দূরত্ব বা আবেগগত সহায়তার অভাবে অনেক তরুণ মানসিক চাপের কারণে নেশা বা আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে। সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশ তরুণদের সঠিক পথে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনার দুর্বলতা
ধর্মীয় নৈতিকতা ভেতর থেকে নিয়ন্ত্রণ তৈরি করে। এই শক্তি দুর্বল হয়ে গেলে তরুণরা সহজেই বাহ্যিক প্রলোভনে আক্রান্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের আসক্তি গ্রহণ করে।
৫. মনোযোগ আকর্ষণের প্রবণতা
যথাযথ ভালোবাসা, প্রশংসা বা উৎসাহ না পেলে অনেক তরুণ ভুল পথে বিশেষত্ব দেখাতে চায়। আত্মপ্রকাশের সঠিক পথ না জানার কারণে তারা নেশা, বেপরোয়া আচরণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ে।
৬. আসক্তির ক্ষতি সম্পর্কে অজ্ঞতা
বহু প্রচার–প্রচারণা থাকা সত্ত্বেও অনেকে এখনো মাদক বা অন্যান্য নেশার ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন নয়। ভুল ধারণা বা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তারা এমন কাজে যুক্ত হয় যা তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়।
৭. অতিরিক্ত অবসর সময়
গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্ত না থাকলে শূন্যতা ও একঘেয়েমি তরুণদের ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। ফাঁকা সময়েই খারাপ প্রভাব ও নেশার প্রতি আকর্ষণ বেশি কাজ করে।
সিএ/এএ


