দীপু সরকার
এ দেশের জনগনের কাছে একটি অতি পরিচিত ও অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক শব্দ যানজট। যানজট জাতীয় জীবেন অভিশাপ স্বরূপ। দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে এ সমস্যা প্রকট, বিশেষ করে ঢাকা শহের বেড়েই চলেছে যানজট সমসার তীব্রতা। বাসা থেকে বের হওয়া মানেই যানজটের সম্মুখীন হওয়া। ঢাকা শহরে যানজট সমস্যার বেশ কয়েকটি কারণ ও রয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেন এর অন্যতম প্রধান একটি কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা যেন বছরের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি এর অন্যতম কারণ হলেও সারা বছর অতিরিক্ত রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ি যানজটের জন্য দায়ী। এ যেন উন্নয়নের নামের অবনতির নতুন পদক্ষেপ। যানজট নিরসনে মেট্রো-রেল তৈরির পদক্ষেপ গ্রহন করলেও সেই মেট্রো-রেল তৈরির প্রক্রিয়ার জন্য এখন অনেক রাস্তাতেই তৈরি হয় বিশাল যানজটের। যা নিরসনে নেই কোন পদক্ষেপ। রাজধানী ঢাকায় যানজটের আরও একটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত প্রাইভেটকারের উপস্থিতি। রাস্তার যানবাহনের প্রায় ৮০ শতাংশ হচ্ছে প্রাইভেটকার। কোন কোন পরিবারে ৩/৪ টি প্রাইভেটকার রয়েছে। রোড লাইসেন্স দেওয়ার সময় কর্তৃপক্ষ এই সব বিবেচনায় আনে বলে মনে হয় না। একটি পরিসংখ্যান মতে, গত দশ বছরে শুধু রাজধানীতে যানবাহন বেড়েছে দুই লাখ বার হাজার একশত তিনটি। একটি রিপোর্টে দেখা যায় যে, রাজধানীর মোট রাস্তার ৫৪.২ শতাংশ জায়গা দখল করে রাখে প্রাইভেটকার।
প্রশ্ন জাগে প্রাইভেটকারের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কি? কারা রাতারাতি এত টাকার মালিক হলেন?
যানজটের আরও একটি কারণ হচ্ছে শহরের মধ্যে ট্রেন চলাচল। মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, সায়দাবাদসহ ২০ টি ক্রসিং পয়েন্টে প্রতিদিন ৭২ টি ট্রেন চলাচল করে। এতে প্রায় ৬ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও দেখা যায় যে, অনেক ফুটপাত চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় পথচারীগণ রাস্তায় নেমে আসে। ফলে গাড়ির গতি শ্লথ হয়। আবার যেখানে সেখানে গাড়ি থামানো যানজটকে আরো তীব্র করে তুলেছে। ঢাকা এখন জনসমুদ্র। ধারন ক্ষমতার চেয়ে অনেকগুণ বেশি মানুষ ঢাকা শহরে বাস করে। বিভিন্ন কারণে সকলে যানবাহনের সহযোগিতায় যাতায়াত করে। ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ( যেমনঃ শাহাবাগ, বাংলামোটর, বিজয় সরনি, আগারগাও, মগবাজার, মালিবাগ, গুলিস্থান ) যেন যানজটের আঁতুড়ঘর। এই যানজটের মূলে রয়েছে গাড়ি চালকদের অজ্ঞতা, রিকশার আধিক্য, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকের উদাসীনতা, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা, জেব্রা ক্রসিং এবং ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করা। যার কারণে প্রতিনিয়ত যানজট সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। আবার যখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা রাজপথ ব্যবহার করেন, তখন আশেপাশের সকল রাস্তাতো বন্ধ করে দেওয়া হয়ই, সাথে ফুটপাতগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে পথচারীরা চলাচল করতে না পারে। যার ফলে সৃষ্টি হয় যানজটের।
রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, যার জন্য কর্মস্থলে সঠিক সময়ে পৌঁছানো যায় না। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো সময়মত নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে পারে না বলে অসংখ্য জীবনের অবসান ঘটে এবং ক্ষয়-ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। যা আমাদের মতো দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যানজটের ফলে বছরে প্রায় ২০ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে এবং ৩২ লাখ কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনগুলো গড়ে ৭ ঘণ্টা আটকে থাকে, ফলে যাত্রীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
এ ভয়াবহ যানজট সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে হলে সরকারকে অতি দ্রুত যথাযথ কঠোর আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা এ সমস্যার ফলে জাতীয় জীবনে বিপর্যয় নেমে আসছে ধীরে ধীরে। শুধু সরকারের একার পক্ষে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই এই ভয়াবহ সমস্যা হতে আমরা মুক্তি পেতে পারি।