Tuesday, November 25, 2025
28 C
Dhaka

সাবা সিদ্দিকা সুপ্ত এর গল্প “অন্ধাস্তিত্ব”

অন্ধাস্তিত্ব

সবে আর পনের কি বিশ সেকেন্ড আছে হাতে নিজের জীবনের জন্য। বাম পা’টা বাড়িয়েই এগুনো শুরু করলো তিথি। সময়টা ঠিক সন্ধ্যা। আকাশের গোল জিনিসটাকে ‘চাঁদ’ নামের কিছু মনে না হলেও পরক্ষণেই ও বুঝতে পারলো সেটা পূর্ণিমা। আলোতে অন্ধকারের ঘনত্ব ক্রমশ বেড়ে উঠছিল যা বোধ হয় “রো”- কেও হার মানিয়েছিল। হয়ত কিছুক্ষণ পরই তিথি থাকবে না, আবার থাকতেও পারে। ওর ইচ্ছে করছিল চাঁদের আলোটাকে টুপ করে নিভিয়ে দিতে। চাচ্ছিল না সেখানে ও আর পাহাড়টা ছাড়া আর কেউ থাকুক।
শরীরটাকে ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তিথি। এক পা, দু পা করে পাহাড়ের ধারে এগিয়ে যেতে থাকলো। ঠিক যেভাবে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল জীবনের প্রত্যেকটি সফলতার দিকে। কিন্তু এ যে অন্যরকম সফলতা। মৃত্যুকে ও চ্যালেঞ্জ করেছিল, মৃত্যু ওকে গ্রহণ করুক আর নাই করুক ও মৃত্যুর আঁচল ছাড়বে না। পাহারের ধারে দশ সেকেন্ডের মধ্যে পৌছেও গেলো ও। ত্রিশ তলা সমান পাহাড়টা থেকে নিচে তাকিয়ে একটুও মাথা ঘোরালো না, পা’টা কাঁপল না। কী করবে ও এখন?! “গুডবাই আর্থ” বলে চিৎকার দেবে!! কিন্তু এই নাটকীয়তাটা কি না করলেই চলছিল না! একটু পরেই যা হতে চলেছে সেটাই তো তিথির জীবনের সবচেয়ে বড় নাটক, যার কাছে সমস্ত এ্যাকটিং ফিকে পরে যায়।
আর এক পা বাড়ালেই অভিকর্ষের টান পড়বে। ভূমি ওকে নিজের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে চাইবে। কিন্তু নাহ, এটা সুইসাইড না।
বাঞ্জি জাম্প, জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় ভ্রমণ; যেখানে তিথি ওর সব না পারাগুলোকে জয় করবে। যেখানে তিথি একটা বাঞ্জি জাম্প করার আগে ইমোশনালী কথাগুলো ভেবে পা বাড়াচ্ছে, সেখানে হয়ত কিছু মেয়ে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণায় সুইসাইড করার আগে এই কথাগুলোই ভাববে। সেই মেয়েটা হয়তো অন্যের থেকে হাজার গুণে ব্রিলিয়্যান্ট। সফলতার চূড়ান্ত সীমায় পৌছানোর ঠিক আগ মুহূর্তে যখন একটা মেয়ে দেখতে পায় যে, সে মেয়ে হয়ে ব্রিলিয়্যান্ট বলে তার ছেলে ক্লাসমেটকে এই নিয়ে তিরস্কার করা হচ্ছে তখন তার সফলতার পেছনে হাজারটা সাপোর্ট থাকা সত্ত্বেও মনের একটা যায়গা ভেঙে যায়। পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে প্রচুর পরিমাণে হরমোন নিঃসরিত হয়, জীবণকে খুবই গুরুত্বহীন বলে মনে হয়। তবে কি এই কথাটা শোনার জন্যই বেঁচে থাকা, এত পরিশ্রম, এত জানা!
পনের জনের মধ্যে দশ জন ছেলের পাঁচ জন মেয়ের প্রতি এক্সট্রা রেসপেক্ট পারতপক্ষে দেখতে ভালো হলেও তা কি আদৌ অপমানের নয়! এর মানে কি এই নয় যে, মেয়েরা দুর্বল বলে তাদেরকে আলাদাভাবে রেসপেক্ট করার আইন জারী করে দেওয়া হয়েছে! কই, কোন মেয়ের জন্য তো এমন কোন রুল তৈরি হয়নি যে যানবাহনে কোন পুরুষ সহযাত্রী দাঁড়িয়ে যাত্রা করলে তাকে উঠে বসতে দিতে হবে। তবে মানবিকতার ব্যাপারটা আলাদা। অনেকে মানবিকতার ধারও ধারে না। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কিংবা নিজের ইমেজ লেভেল বাড়াতে নিজের সিট ছেড়ে দেয় এরা।
নিম্নবিত্ত পরিবারে অনেক কষ্ট করে ডাক্তারি পড়া মেয়েটিকে যখন বলা হয়, “ছুড়ি, কাঁচি দিয়ে মানুষের চামড়া কেটে আর কি হবে?? বিয়ের পর স্বামীর সেবাই তো তোমার আসল কাজ”, তখন কি তার সব চেষ্টা বিফলে যায় না!!
তবে মেয়েরা, তোমাদের দৃষ্টিটাকে খোল। নিজেকে জান, নিজেকে জানো, নিজেকে শেখো। অন্ধত্বকে পেছনে মাড়িয়ে বাঞ্জি জাম্প দিয়ে প্রমাণ করে দাও নিজের অস্তিত্বকে।

লেখা:  সাবা সিদ্দিকা সুপ্ত

spot_img

আরও পড়ুন

বাংলাদেশকে সামুদ্রিক সহযোগিতা কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাকিস্তানের

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে...

প্রাথমিক শিক্ষকদের ৩ দিনের কর্মবিরতি শুরু

তিন দফা দাবিতে দেশব্যাপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা...

‘এলডিসি উত্তরণ ও বন্দর নিয়ে কেবল নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন,...

উপদেষ্টা পরিষদে গণভোট অধ্যাদেশ পাস

উপদেষ্টা পরিষদ গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে।...

বিচার বিভাগ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, জাতীয় প্রচেষ্টার...

বাংলাদেশে রফতানির জন্য ১ লাখ টন চাল কিনছে পাকিস্তান

বাংলাদেশে রফতানির জন্য দেশীয় বাজার থেকে এক লাখ টন...

মঙ্গলবার থেকে ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ

মেট্রোরেলে যাতায়াত আরও সহজ করতে নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।...

খাওয়ার পর ১৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস জীবনে আনে ইতিবাচক পরিবর্তন

সারাদিনের ব্যস্ততার পর খাবার শেষ করে অনেকেই সরাসরি বিশ্রামে...

নেতানিয়াহুকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান এরদোয়ানের

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কঠোর...

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া

ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন...

ভূমিকম্প: রাজধানীতে ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত

রাজধানী ঢাকায় পরপর হওয়া ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০০টি ছোট-বড় ঝুঁকিপূর্ণ...

আমাদের গণতাওবা করা জরুরি: শায়খ আহমাদুল্লাহ

পরপর কয়েকটি ভূমিকম্পে জনমনে উদ্বেগ বাড়ায় সচেতনতার পাশাপাশি আল্লাহর...

বৃহত্তর সুন্নি জোট থেকে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে: গিয়াসউদ্দিন তাহেরী

বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাংগঠনিক সচিব আল্লামা মুফতি...

রাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ ১৬ দেশে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন শুরু

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য ১৬টি দেশে বসবাসরত প্রবাসী...
spot_img

আরও পড়ুন

বাংলাদেশকে সামুদ্রিক সহযোগিতা কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাকিস্তানের

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে একটি আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং কর্পোরেশন (পিএনএসসি) এবং বাংলাদেশ...

প্রাথমিক শিক্ষকদের ৩ দিনের কর্মবিরতি শুরু

তিন দফা দাবিতে দেশব্যাপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তিন দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি চলবে...

‘এলডিসি উত্তরণ ও বন্দর নিয়ে কেবল নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ এবং বন্দর সংশ্লিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেবল নির্বাচিত সরকারেরই...

উপদেষ্টা পরিষদে গণভোট অধ্যাদেশ পাস

উপদেষ্টা পরিষদ গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অধ্যাদেশ পাস হয়। গত...
spot_img