হৃদরোগ এখনো বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলেও এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি অবস্থা। করোনারি হৃদরোগ ঘটে যখন হৃদপিণ্ডে রক্ত বহনকারী ধমনীগুলো সংকুচিত বা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, সাধারণত ধমনীতে প্লাক বা ফ্যাট জমে এমনটি ঘটে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘এথেরোস্ক্লেরোসিস’। এর ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ কমে যায়, যা ধীরে ধীরে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিওরের কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ড ও ধমনীর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে ধমনীর দেয়াল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত ফলো-আপ, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখাই হৃদরোগ প্রতিরোধের কার্যকর উপায়। PubMed Central–এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করা হলে তা সরাসরি হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
উচ্চ কোলেস্টেরল
সব ধরনের কোলেস্টেরল ক্ষতিকর নয়। তবে অতিরিক্ত ‘LDL’ বা খারাপ কোলেস্টেরল ধমনীতে জমে প্লাক তৈরি করে, যা ধমনীগুলো শক্ত ও সরু করে ফেলে। খাদ্যতালিকায় ফল, সবজি ও গোটা শস্যের পরিমাণ বাড়ালে খারাপ চর্বি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মোট কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস
রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘ সময় বেশি থাকলে তা রক্তনালী ও স্নায়ুর ক্ষতি করে, যা হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে। নিয়মিত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে। গবেষণায় বলা হয়, করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD) ডায়াবেটিস রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার একটি বড় কারণ।
ধূমপান
ধূমপান ধমনীর অভ্যন্তরীণ আস্তরণের ক্ষতি করে, রক্ত প্রবাহ ও অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে হৃদপিণ্ডে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, ধূমপান করোনারি ধমনী রোগের (CAD) অন্যতম প্রধান ঝুঁকি উপাদান।
স্থূলতা
বিশেষ করে পেটের অংশে অতিরিক্ত চর্বি জমলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সঠিক ব্যায়াম ও খাদ্য সচেতনতার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন না করলে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত প্রবাহ বাড়ায়। তাই অলস জীবনযাপন না করে শরীরচর্চাকে অভ্যাসে পরিণত করুন।
সিএ/এমআর