শীত মানেই গ্রামবাংলা থেকে শহরের বাজার—সবখানেই তরতাজা সবজির সমাহার। এই মৌসুমে শুধু রান্নাই নয়, সহজ উপকরণে তৈরি করা যায় নানা স্বাদের ভর্তা। ভাত কিংবা পিঠার সঙ্গে ভর্তা খেতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য শীতকাল যেন এক অনাবিল ভর্তা-বিলাসের সময়। শীতের সন্ধ্যায় চিতই পিঠা আর দুপুরের টেবিলে গরম ভাত—দুই ক্ষেত্রেই ভর্তা হয়ে ওঠে খাবারের মূল আকর্ষণ।
শীতের সবজি দিয়ে তৈরি ভর্তার স্বাদ যেমন আলাদা, তেমনি এর প্রস্তুতিও সহজ। বেগুন, কাঁচা টমেটো, ধনে পাতা কিংবা শিম—সব উপকরণেই পাওয়া যায় নিজস্ব ঘ্রাণ ও ঝাঁজ। সরিষার তেলের গন্ধে ভর্তা হয়ে ওঠে আরও মুখরোচক।
বেগুন ও কাঁচা টমেটোর ভর্তা শীতের জনপ্রিয় এক আয়োজন। মাঝারি একটি বেগুন হালকা আঁচে ভালোভাবে ভেজে খোসা ছাড়িয়ে নরম অংশ বের করে নিতে হয়। সঙ্গে কাঁচা টমেটো ছোট করে কুচি করে সামান্য সেঁকে নেওয়া হয়। এরপর বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ, রসুন ও লবণ একসঙ্গে মেখে সরিষার তেল ও ধনেপাতা মিশিয়ে নেওয়া হয়। ঝাল বাড়াতে চাইলে ভাজা শুকনা মরিচ চটকে দেওয়া যায়, আর টক-ঝালের ভারসাম্যের জন্য টমেটোর পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
গোটা ধনে পাতা ভর্তা শীতের আরেকটি সতেজ স্বাদের পদ। বড় আঁটির ধনে পাতা ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে খুব সূক্ষ্ম করে কুচি করা হয়। এরপর পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, রসুন ও লবণের সঙ্গে ধনে পাতা ভালো করে চটকে নিয়ে সরিষার তেল মেশানো হয়। হালকা টক স্বাদের জন্য শেষে লেবুর রস যোগ করা যায়, যা ভর্তার স্বাদকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
শিম ভুনা ভর্তা শীতের সবজির তালিকায় বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। পাতলা করে কাটা শিম অল্প পানি ও লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নেওয়া হয়। শুকনা লাল মরিচ হালকা পোড়ানোর পর সেদ্ধ শিমের সঙ্গে বেটে নেওয়া হয়। এরপর কড়াইতে তেল দিয়ে পোড়ানো মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ও লবণ ভেজে সব উপকরণ একসঙ্গে চটকে সরিষার তেল মিশিয়ে নেওয়া হয়।
ঝালপ্রিয় মানুষের জন্য কাঁচা মরিচের ভর্তা শীতেও সমান জনপ্রিয়। কাঁচা মরিচ ঝাল সহ্য অনুযায়ী কাঁচা বা হালকা ভেজে নেওয়া যায়। মরিচ, রসুন ও লবণ ভালো করে বেটে পেঁয়াজ কুচি মিশিয়ে শেষে সরিষার তেল, ধনেপাতা ও লেবুর রস যোগ করলে তৈরি হয় ঝাঁঝালো অথচ মুখরোচক ভর্তা।
শীতের দিনে এসব ভর্তা শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, বরং ঘরোয়া রান্নার ঐতিহ্যকেও নতুন করে মনে করিয়ে দেয়।
সিএ/বিই


