ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটও গ্রহণ করা হবে। ভোট হবে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা সময়জুড়ে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এই তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের দিন ১১ জানুয়ারি এবং আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, আর প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি এবং তা শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। ১২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ৩০০ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। সেই সরকারের ১৬ মাস পর তফসিল ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন।
গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি দল দাবি জানায়। পরে ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। এরপর ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে দুজন সম্মত হন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার ও ইসি প্রস্তুতি নেয়। ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। আজ সিইসি সেই তারিখ চূড়ান্ত করেন।
ইসিতে নিবন্ধিত ৫৬টি দলই দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে, তাই তারা অংশ নিতে পারবে না। অন্য নিবন্ধিত দলগুলো অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। এছাড়া যোগ্য যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন।
গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। এ কমিশনের অধীনে এটাই প্রথম জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট। একই দিনে দুটি ভোট গ্রহণকে সময় ব্যবস্থাপনার বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সে কারণে এবার ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকার জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করবে। প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবে, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে বিশেষ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সিএ/এএ


