Saturday, December 13, 2025
28 C
Dhaka

ধর্ষণ, এর শাস্তি বহির্বিশ্ব ও বাংলাদেশ এবং আদ্যোপান্ত

ইভান পাল

ইদানিংকালে পৃথিবীজুড়ে  প্রচুর গরম পড়েছে। পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষও এই তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে খুব চিন্তিত। আবার এখন কোন কোন জায়গাতে খুব বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে।।

বাংলাদেশের মানুষ তা নিয়েও নিশ্চয় বেশ চিন্তিত?? কিন্তু, আসলে তা নয়।।

বাংলাদেশের প্রতিটি বাবাই এখন চিন্তিত তাদের ঘরে থাকা একমাত্র মেয়েটির নিরাপত্তা নিয়ে,  এদেশের প্রতিটি মানুষই এখন চিন্তায় ঢোক গেলে তাদের প্রত্যেকের ঘরে থাকা মা, বোন কিংবা আদরের মেয়েটিকে নিয়ে।।  

আজকাল নিউজ চ্যানেল আর সংবাদপত্রের প্রথম পাতাতেই একেবারে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা থাকে “ধর্ষণ ” সংক্রান্ত খবরগুলো।।

এখন এক লক্ষ সাত চল্লিশ হাজার পাঁচশ সত্তর বর্গমাইলের ডিঙ্গি নৌকোর ছোট্ট এই দেশটির চায়ের দোকানের আড্ডাগুলো তে রাজনীতি নিয়ে ঝড় ওঠে না, ঝড় ওঠে না কোন চাকরি আন্দোলন কিংবা তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমতি সংক্রান্ত কোন বিষয়ের।।

এদেশের চায়ের দোকান গুলোতে এখন ঝড় ওঠে শুধুমাত্র একটাই ঘৃণার শব্দের, একটাই ধিক্কারের।। আর তা হচ্ছে— ধর্ষণ।।

ঝড় ওঠে— রাজধানী ঢাকার ওয়ারিতে সাত বছরের শিশু সামিয়া আফরিন সায়মা’র ধর্ষণের খবর নিয়ে।।

প্রিয় পাঠক, আজ আগামীর এ প্রতিবেদনে লিখতে এসেছি, আপনাদের জানাতে এসেছি সবচেয়ে আলোচিত এবং ঘৃনীত শব্দ “ধর্ষণ ” নিয়ে।

ধর্ষণ শব্দটি অতীব নোংরা, ঘৃণার শব্দ হলেও গত প্রায় সাত থেকে আট বছর যাবত সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা, ডিঙ্গি নৌকোর এই ছোট্ট দেশটিতে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবেই বেড়েছে।।

বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন, শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের মতো ঘৃণ্য কিছু ঘটনা।। যার আদ্যোপান্ত নিয়েই চ্যানেল আগামীর আজকের এই বিশ্লেষণধর্মী নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন।।

ধর্ষণ কি??

এ প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়া বলছে,

” ধর্ষণ’ এক ধরনের যৌন আক্রমণ। সাধারণত, একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে।

অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত।।

উইকিপিডিয়া থেকে আরও জানা যায়, ধর্ষণ শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে কখনো কখনো ‘যৌন আক্রমণ’ শব্দগুচ্ছটিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।।

তবে বিভিন্ন বিচারব্যবস্থার হিসেবে ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।।

সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, স্বাস্থ্যকর্মী এবং আইনবিদদের মধ্যেও এর সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।।

ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহাসিক যুগ ও ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতেও ধর্ষণের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে বলে জানা যায়।

১৯৭৯ সালের পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো পুরুষকে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করার দায়ে অভিযুক্ত করা যেত না।।

১৯৫০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু রাজ্যে কোনো শ্বেতাঙ্গ নারী স্বেচ্ছায় কোনো কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হলেও সেটিকে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হত।।

  ২০১২ সালের পূর্ব পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ধর্ষণকে কেবল নারীদের বিরুদ্ধে পুরুষদের দ্বারা সংঘটিত একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করত।

  কিছু দেশ বা বিচারব্যবস্থা ধর্ষণ ও যৌন আক্রমণকে পৃথক হিসেবে চিহ্নিত করে।

১৯৯৮ সালে রুয়ান্ডার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ধর্ষণকে “চাপ প্রদানের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির ওপর সংঘটিত যৌন প্রকৃতির শারীরিক আক্রমণ” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থায় ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘যৌন আক্রমণ’ কিংবা ‘অপরাধমূলক যৌন আচরণ’ শব্দগুচ্ছকে ব্যবহার করা হয়।। ( সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)  

তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ধর্ষণের সংজ্ঞারও পরিবর্তন ঘটেছে।

উইকিপিডিয়ায় ধর্ষণের প্রকারভেদ ও উল্লেখ করেছে।

এ প্রসঙ্গে তারা বলছে—-

ধর্ষণ বা বলাৎকারকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। যেমনঃ ঠিক কোন পরিস্থিতিতে তা হচ্ছে, বা যিনি নির্যাতিতা —- তার বৈশিষ্ট্য কী ছিল, যে অপরাধী তার পরিচয় বা বৈশিষ্ট্য কী, এইসবের উপর ধর্ষণের বিভিন্নরকম শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এই যে ধর্ষণের নানান শ্রেণি, একেই বলা হচ্ছে ধর্ষণের প্রকারভেদ বা ধরন।

তাদের এ তথ্য অনুযায়ী ধর্ষণের প্রকারভেদঃ—

ডেট ধর্ষণ

গণ ধর্ষণ

বৈবাহিক ধর্ষণ

শিশু ধর্ষণ

সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণ

কারাগারে ধর্ষণ

ধারাবাহিক ধর্ষণ

পরিশোধকৃত ধর্ষণ

 যুদ্ধকালীন ধর্ষণ   

প্রতারণার দ্বারা ধর্ষণ

সংশোধনী ধর্ষণ

হেফাজতগত ধর্ষণ (হেফজতে ধর্ষণ বলতে মুলত বুঝায়—-

কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীর হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে (যেমন: হাসপাতাল কর্মী, পুলিশ, সরকারী কর্মী) যেকোন প্রকারে ধর্ষণকে।)

  তবে উইকিপিডিয়া উপরে উল্লিখিত এইযে সংজ্ঞা এবং প্রকারভেদ নিয়ে বলছে এই শ্রেণিবিন্যাসই শেষ নয়। তারা বলছে—-

 নতুন নতুন গবেষণা এবং মানুষের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করেও ধষর্ণের নতুন নতুন সংজ্ঞা আসতে পারে।।

বাংলাদেশে ধর্ষণের সংজ্ঞাঃ

যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভয় ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।

তবে এই ধর্ষণ নামক ঘৃণ্য অপরাধটিকে আরো সুস্পষ্ট এবং সুসংহত ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ১৮৬০ সালের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩৭৫ ধারাতে।।

এইখানে ধর্ষণ বলতে,

১. মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে

২. মেয়ের অনুমতি ছাড়া

৩., সম্মতির সাথে,

কিন্তু মৃত্যুভয় বা আঘাত দেওয়ার কারণে সম্মতি নিয়ে

৪. সম্মতিতে,

  যখন মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছেলেটি সম্মতি আদায় করে ছেলেটি জানে ভবিষ্যতে সে মেয়েটিকে স্ত্রী রূপে গ্রহণ করবে না

৫. তার সম্মতি বা সম্মতি ছাড়া, যখন ভিক্টিমের বয়স চৌদ্দ বছরের নিচে হয়।

উপরের এই ৫টি সহবাসকে ধর্ষণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।।

বিষয়টা সত্যিকার অর্থেই ধর্ষণের বিচার করার জন্য যথেষ্ট ছিল এবং সাথে এমন ও একটা বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছিল যে বিবাহিত স্ত্রীর বয়স যদি ১৩ বছরের কম হয় তবে তার সাথে মিলন উক্ত নারী উপভোগ করলেও রাষ্ট্র স্বামীকে ধর্ষণের শাস্তি দিবে। তবে ধারণা করা হয়, এই বিধানটা  বাল্যবিবাহ ঠেকানোর জন্যই করা হয়েছিল। এই আইনটি যদিও এখনও বহাল আছে কিন্তু এই আইনে এখন আর কোন মামলা হয়না কেননা এর পরে আরো অনেকগুলো সময়োপযোগী আইন এসেছে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ধর্ষণের ঘটনাসমূহ ও পরিসংখ্যানঃ

বাংলাদেশে ধর্ষণ নামক এই ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ব্যাপক হারে বেড়েছে। বাচ্চা থেকে বুড়ো কেউই সে তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না।

খোদ পিতাই তার কন্যা সন্তানকে ধর্ষণ করেছে দিনের পর দিন— এ খবরেও এই দেশের মাটি ও মানুষ অবাক হয়েছে, থুথু ছিটিয়েছে।।

আবার এগুলোর পাশাপাশি সবথেকে উল্লেখযোগ্য এবং লাল কালিতে মার্ক করা খবর হচ্ছে, এইতো সেদিন ঢাকার ওয়ারিতে নাকি সাত বছরের শিশু সায়মা কে ধর্ষণ করা হয়েছে আর তারপর তাকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। সেদিন সায়মার পরিবারের আর্তনাদ আর কাতর স্বরে চিৎকার শুনে সব্বাই কেদেঁছিল। কেদেঁছিল পুরো দেশ, আর ক্ষোভে আক্রোশে ফেটে পড়েছিল সারাদেশের মানুষ।

একি হলো! একি করলো সেই ঘৃণ্য নরপশুটা! অতটুকু একটা সাত বছরের বাচ্চার দিকেও বুঝি তার লালসা জেগে উঠেছিলো।।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ইত্তেফাকের এবছরের ১৫ ই মে ‘ র এক প্রতিবেদনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিট  এর বরাত দিয়ে তাদেরই প্রস্তুত করা মে মাসের মাসিক প্রতিবেদনে  বলা হয়েছিল—-

ধর্ষণের মাত্রা কমছেই না। সেইসাথে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে দেশে মোট ধর্ষণের সংখ্যা ৭৩২টি।

তাদের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। গতবছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১৬ জন। এরপরেই রয়েছে ৭ থেকে ১২ বছরের মেয়েরা। ২০১৮ সালে ১০৪ মেয়েশিশু ধর্ষিত হয়েছে। আর এবছর  ২০১৯ র প্রথম চার মাসেই ১৩ থেকে ১৮ বছরের ৬৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, আর ৭-১২ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা ৫২ জনে।

আর এক বছরের কম থেকে ছয় বছরের শিশু ধর্ষণের সংখ্যা খুবই মারাত্মক। গতবছর যা ছিল ৫১ জনে। এবছর এই চার মাসেই অর্থাৎ ২০১৯ এর জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই সংখ্যা ৩৮ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত প্রায় পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধর্ষণের চালচিত্র দেখলে শিউরে উঠতে হয়।

প্রিয় পাঠক, চলুন এক নজরে দেখে আসি ঘৃণ্য এই অপরাধ গত পাচঁ বছরে আশঙ্কাজনক ভাবে তর তর করে যে বেড়ে ওঠেছে তার অবস্থা সম্পর্কেঃ—

২০১৪ সালে মোট ধর্ষণ ৭০৭টি। এর মধ্যে একক ধর্ষণের সংখ্যা ৩৮৭টি, গণধর্ষণ ২০৮, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ৬৮টি, ধর্ষণের পরবর্তী আত্মহত্যা ১৩ টি আর ধর্ষণ চেষ্টা ৮১টি।

২০১৫ সালে মোট ধর্ষণ ৮৪৬টি। এর মধ্যে একক ধর্ষণের সংখ্যা ৪৮৪টি, গণধর্ষণ ২৪৫, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ৬০, ধর্ষণের পরে আত্মহত্যা ২ আর ধর্ষণ চেষ্টা ৯৪টি।

২০১৬ সালে মোট ধর্ষণ ৭২৪টি। এর মধ্যে একক ধর্ষণের সংখ্যা ৪৪৪টি, গণধর্ষণ ১৯৭, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ৩৭, ধর্ষণের পরে আত্মহত্যা ৮ আর ধর্ষণ চেষ্টা ৬৫টি।

২০১৭ সালে মোট ধর্ষণ ৮১৮টি। এর মধ্যে একক ধর্ষণের সংখ্যা ৫৯০টি, গণধর্ষণ ২০৬, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ৪৭, ধর্ষণের পরে আত্মহত্যা ১১ আর ধর্ষণ চেষ্টা ১০৪টি।

২০১৮ সালে মোট ধর্ষণ ৭৩২টি। এর মধ্যে একক ধর্ষণের সংখ্যা ৫০২টি, গণধর্ষণ ২০৩, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ৬৩, ধর্ষণের পরে আত্মহত্যা ৭ আর ধর্ষণ চেষ্টা ১০৩টি।

আর সবশেষ ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মোট ধর্ষণ ৩৫৪টি। এর মধ্যে একক ধর্ষণের সংখ্যা ২৫৬টি, গণধর্ষণ ৯৪, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ১৮টি, ধর্ষণের পরে আত্মহত্যা ৬ আর ধর্ষণ চেষ্টা ৫৫টি।

আবার, দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোরই ৮ই জুলাইয়ের প্রতিবেদনে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর এক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷ যেখানে তারা জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ ছয় মাসে বাংলাদেশে ৩৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে সারা দেশে ৪৭ শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৪৭ শিশুর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৯ জন।

এছাড়াও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন।

দৈনিক প্রথম আলোরই আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছেঃ–

চলতি বছরের প্রথমার্ধে গড়ে মাসে অন্তত ৪৩টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অথচ যেখানে গত বছর এই হার ছিল এর অর্ধেকের মতো।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র নয়টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সংবাদ এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রতি মাসেই মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত এক মাসিক সংখ্যাগত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে থাকে।। যে প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত নতুন তথ্য সংযুক্ত থাকে।

উপরে আমি এ সংস্থাটিরই জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন সংক্রান্ত তথ্যের কথা উল্লেখ করেছিলাম।  

আর এই মাসের অর্থাৎ জুলাইয়ের ২ তারিখ আইন ও সালিশ কেন্দ্র আবারো তাদের নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেঃ–

২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে মোট ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৬৩০টি। এগুলোর অর্ধেকের মতো ঘটনায় ভুক্তভোগীর বয়স বলা আছে। দেখা যায়, তাদের সিংহভাগেরই বয়স ১৮ বছর বা তার নিচে। আর ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার কারণে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ২১টি। ধর্ষণের শিকার সবচেয়ে বেশি হয়েছে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা।।

আবার, এর মধ্যে ধর্ষণের পর ৩৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে অন্তত ৭ জন।

সংস্থাটি তাদের উক্ত প্রতিবেদনে আরো জানিয়েছে,  গত ছয় মাসে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১২৭ জন নারী। এদের মধ্যে ৮ জন হয়রানি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ৩ জন নারী ও ২ জন পুরুষ।

এছাড়া পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী। এদের মধ্যে ১৩৭ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। আর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ২৬ জন নারী। এছাড়া আরো ২৯ জন নারী শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

গত ৬ মাসে যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৮ জন নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৫১ জনকে। এছাড়া যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ২জন।

এর বাইরে, গত ছয় মাসে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১১জন নারী।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এ হিসেবে, গত ছয় মাসে শিশু ধর্ষণের মোট ঘটনার সংখ্যা ২৫৮টি। গত বছর ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার ফলে শিশু হত্যার ঘটনা ছিল ৩৫টি।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের হিসাবে, গত ছয় মাসে শিশু ধর্ষণের ঘটনা খুবই ভয়াবহ ভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে।

যেখানে দেখা যায় মাসে গড়ে প্রায় ৮৩টি। গত বছর এই হার ছিল এর প্রায় অর্ধেক।

আবার আইন ও সালিশ কেন্দ্র গত পাঁচ বছরে ধর্ষণের শিকার যত মেয়ের বয়সের হিসাব দিয়েছে, তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই শিশু-কিশোরী।। ( সূত্রঃ প্রথম আলো)

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৩৯টি এবং হত্যা মামলা হয়েছে ৩৫১টি। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সারা দেশে শিশু ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৩০০-এর কিছু বেশি। আর গত পাঁচ বছরে মোট শিশু ধর্ষণ মামলার সংখ্যা ছিল ৩ হাজারের কিছু বেশি।

ধর্ষণ সংক্রান্ত শাস্তির বিধানঃ

বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারায় ধর্ষণ এবং ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদির সাজা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

এ ধারায় একজন অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডরেও বিধান রাখা হয়েছে।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের জ্ঞাতার্থে বাংলাদেশের সংবিধানের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ নম্বর ধারাটি, যেখানে ধর্ষণ সম্পর্কিত শাস্তির বিধান রয়েছে, তা হুবুহু তুলে ধরা হল।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারা মতে সাজাসমুহঃ—

৯. (১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

সংবিধানের উক্ত ৯ এর ১নম্বর উপ-ধারা সম্পর্কিত ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে—-

    যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ( ষোল বৎসরের) অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা (ষোল বৎসরের) কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন৷

. যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

(৩.) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তা হলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

(৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে—-

(ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন;

 (খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বৎসর  সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন৷

(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তাহলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন৷

যৌন পীড়নের দন্ড সম্পর্কে উক্ত আইনের ১০ নম্বর ধারায় আরো বলা হয়েছে—-

  যদি কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে তাহার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোন অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোন অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোন নারীর শ্লীলতাহানি করেন তাহলে তার এই কাজ হইবে যৌন পীড়ন এবং তার জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যুন তিন বছর  সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন৷

এছাড়াও ২০০০সালের উক্ত আইনের ১৩ নম্বর ধারাতে ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে জন্মলাভকারী শিশু সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়েছেঃ—-       

  (১) অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, ধর্ষণের কারণে কোন সন্তান জন্মলাভ করলে—-

 

       (ক) উক্ত সন্তানকে তার মাতা কিংবা তার মাতৃকুলীয় আত্মীয় স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাবে;

 

    (খ) উক্ত সন্তান তার পিতা বা মাতা, কিংবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হবার অধিকারী হবে;

 

       (গ) উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহণ করবে;

 

       (ঘ) উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় তার বয়স একুশ বছর পূর্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রদেয় হবে, তবে একুশ বছরের অধিক বয়স্ক কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে তার বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত এবং পঙ্গু সন্তানের ক্ষেত্রে তিনি স্বীয় ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত প্রদেয় হবে৷

(২) সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করবে৷

(৩) এই ধারার অধীন কোন সন্তানকে ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার ধর্ষকের নিকট হতে আদায় করতে পারবে এবং ধর্ষকের বিদ্যমান সম্পদ হতে উক্ত অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হবেন সেই সম্পদ হইতে এটি আদায়যোগ্য হবে৷

বাংলাদেশে ধর্ষণ বিষয়ক এই পর্যন্ত উপরে উল্লিখিত ২০০০সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটিসহ চারটি ধর্ষণ বিষয়ক আইনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছ।

যেখানে ফৌজদারি আইন ১৮৮৬ এর ৩৭৫ এবং ৩৭৬ ধারায় নারী শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অধ্যাদেশ;

১৯৮৩ এর ৭ ও ৮ ধারা,

নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ১৯৯৫ এর ধারা—- ২ এর (গ) সহ ধারা- ৬,

এবং সবশেষ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন—-

২০০০ এর ধারা ৯(১) ও ৯ এর ১০ এ ধর্ষণের দন্ড এবং ৯ এর ১৩ তে ধর্ষণের ফলে জন্মলাভকারী শিশু সম্পর্কিত বিধান দেওয়া হয়েছে।।

বাংলাদেশের সংবিধানের এই চারটি আইনই হচ্ছে পুরুষ কর্তৃক নারী বা শিশুকে ধর্ষণের আইন এবং উক্ত আইনেই ধর্ষণের শাস্তির বিধান সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায়ও তুলে ধরা হয়েছে।।

ধর্ষণ বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করেছে ১৮৬০ সালের দন্ড বিধির ৩৭৫ ধারা। যা আমি উপরের আলোচনাতেই উল্লেখ করেছি।।

১৯৮৩ এর ৭ ও ৮ ধারায় ধর্ষণ এর কোন শাস্তির বিধান না করলেও ধর্ষণ এর সময় মৃত্যু ঘটানো বা ঘটানোর চেষ্টার শাস্তির বিধান করা হয়েছে।

কিন্তু, ধর্ষণের কোন শাস্তির বিধান করা হয়নি কারন ধর্ষণের বিচার উক্ত দন্ডবিধিতেই করা সম্ভব ছিল। তবে এই আইন এখন আর কার্যকর নাই, ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু আইন প্রণয়নের সাথে সাথেই উক্ত আইনটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এই আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা দন্ডবিধির আদলেই রেখে দেয়া হয়েছে কিন্তু ধারা – ৬ এ প্রথম বারের মত শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। এই বিধানও ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাতিল হয়ে গিয়েছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের ধর্ষণের শাস্তিঃ

চীনঃ

চীনে ধর্ষণের শাস্তি বলতেই সরাসরি মৃত্যুদণ্ড। তবে কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে ধর্ষকের যৌনাঙ্গ ও কেটে দেয়া হয়।

ফ্রান্স : ফ্রান্সে ধর্ষণের শাস্তি অন্তত ১৫ বছরের কারাদণ্ড, সেইসাথে শারীরিক নির্যাতন। ভিকটিমের ক্ষতি কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করে ধর্ষকের সাজা বাড়িয়ে ৩০ বছর থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড পর্যন্তও করা হতে পারে।

রাশিয়া : রাশিয়ায় ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে কমপক্ষে ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।  ভিকটিমের ক্ষতি কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করে ধর্ষকের সাজা বাড়িয়ে ৩০ বছর পর্যন্ত করা হতে পারে।

গ্রিস : গ্রিসে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে— আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড।

সৌদি আরব : সৌদি আরবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে রায় ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই জনসম্মুখে শিরশ্ছেদ করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান রয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত : সংযুক্ত আরব আমিরাতে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের সাজা হচ্ছে— সরাসরি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড। এক্ষেত্রে কোনোরকম ক্ষমা নেই, ধর্ষণ করলেই অপরাধ প্রমাণের ৭ দিনের মধ্যেই মৃত্যুদণ্ড পেতে হবে।

ইরান : ইরানে সাধারণত ধর্ষককে জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে কোনো ক্ষেত্রে যদি ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি অনুমতি দেন অপরাধী মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে পারে। কিন্তু,  তখনো ধর্ষককে জনসম্মুখে একশ’ দোররা (চাবুকের আঘাত) মারা হবে অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

 

ভারত : আমাদের প্রতিবেশীদেশ ভারতে ২০১৩ সালে ধর্ষণবিরোধী আইন পাশের পর থেকে  ধর্ষণের শাস্তি আগের চেয়ে আরো অনেক কঠোর করেছে দেশটির সরকার। দেশটিতে ধর্ষককে সাজা হিসেবে ৭ বছর থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ধর্ষককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ারও নজির রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রে দুই ধরনের আইন প্রচলিত – অঙ্গরাজ্য আইন এবং ফেডারেল আইন। ধর্ষণ মামলাটি ফেডারেল আইনের অধীনে পড়লে ধর্ষককে অর্থদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়ে থাকে। তবে অঙ্গরাজ্য আইনের অধীনে পড়লে সাজার প্রকৃতি নিশ্চিত নয়। কেননা দেশটির একেক অঙ্গরাজ্যে ধর্ষণের শাস্তি একেক রকম।

ইসরায়েল : ইসরায়েলে ধর্ষক ব্যক্তি ন্যূনতম ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকে৷। (সূত্রঃ সময়টিভি অনলাইন)

গত ৮ই জুলাই  ” শিশু ধর্ষণ রোধে যেসব ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশে “— এ শিরোনামে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে ঢাকায় নিযুক্ত  জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহিরিন এর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ধর্ষণ রোধ করে শিশুদের নিরাপদ রাখার জন্য যে ধরণের অবকাঠামো, লোকবল বা সেবা দরকার সেগুলো এখনো অনেক কম।”

মিস জাহিরিনের মতে,” সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ করে কমিউনিটি লেভেলে যে ধরণের সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজন আছে সেগুলো এখনো কার্যকর নয়। কিছু সার্ভিস আছে বা লোকজন আছে। কিন্তু শিশুদের বিষয় বা এধরণের ঘটনাকে কেউই সেভাবে আমলে নেন না।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রমের পক্ষ থেকে সোশ্যাল ওয়ার্কারদের থাকার কথা, কমিউনিটি লেভেলে এবং প্রবেশন অফিসার যার একটা বিশেষ দায়িত্ব আছে, অনেক জায়গায়ই তারা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।”

তিনি আরো বলেন, “এরা ভালোভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না এবং শিশুদের বিষয়গুলো যেভাবে দেখা উচিত বা কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থাকা উচিত সেগুলো এখনো ওইভাবে আমাদের দেশে গড়ে উঠেনি।”

ধর্ষণ থেকে রক্ষা করার জন্য কী করা উচিত এ সম্পর্কেও তিনি বিবিসি বাংলাকে অবহিত করেন।। এ প্রসঙ্গে তিনি —“ধর্ষণ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে, স্কুল পর্যায়ে আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর পরামর্শ দেন এবং সেইসাথে মেয়েশিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুকেও ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বিরোধী মূল্যবোধ শেখানোর কথাও বলেন, যাতে ভবিষ্যতে সে এ ধরণের আচরণ না করে।

আর এসবের পাশাপাশি ধর্ষণ প্রতিরোধে মনিটরিং বা নজরদারি জোরদারেরও তিনি আহ্বান জানান”।

 

কারণঃ

যৌন সহিংসতা বা ধর্ষণের কারণ হিসেবে—

উইকিপিডিয়া অনেকগুলো দিক চিহ্নিত করেছে। এই যেমনঃ—  

কেউ ক্রোধের বশবর্তী হয়ে এধরনের নোংরা ঘটনা ঘটাতে পারে, বিভিন্ন আক্রমণাত্নক শক্তি প্রদর্শনের জন্যও এরকম ঘৃণ্য ঘটনা ঘটানো হতে পারে, আবার কারো কামনা চরিতার্থ করতেও এধরনের নিন্দনীয় ঘটনা যেকোন সমাজ ব্যবস্থাতেই ঘটতে পারে।। তবে বিভিন্ন গবেষক তাদেরঁ বিভিন্ন গবেষণায় যৌন সহিংসতার জন্য তারাঁ অপরাধীর বা ধর্ষকের মনস্তাত্তিক কারণকেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী করেন।।

প্রতিকারঃ—

১. যৌন সহিংসতা বা ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনাকে প্রতিহত করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে—  পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সন্তানের মধ্যে মূল্যবোধের সৃষ্টি করা ।

পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে বাবা-মায়ের  উচিত সন্তানের সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করা।  

বাবা-মা যেন অবশ্যই জানেন তার সন্তান সম্পর্কে। সে কার সাথে মিশছে, তার বন্ধুরা কেমন, তাদের মনোভাব প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে খেয়াল রাখা।

 

এটি ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, যেহেতু ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনা ছেলেদের দ্বারাই সংঘটিত হয়, তাই পরিবারের ছেলে সন্তানকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে।

তার মধ্যে সচেতনতাবোধ বাড়াতে হবে। মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে সে তার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যৌন সহিংসতা কি, ধর্ষণ কি কিংবা যেকোন মেয়ের সাথেই খারাপ আচরণ করতে তার বোধের জায়গাতে বাধ সাধে, সে যেনো সমাজের যেকোন মেয়েকেই তার অবস্থান থেকে সঠিক সন্মানটুকু দিতে কোন প্রকার কুন্ঠাবোধ না করে।।

আবার ঠিক একইভাবে প্রতিটি সন্তানেরই উচিত তাদের বাবা-মায়ের সাথে সমস্যা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন, আলোচনা করে রাখা, তাদেরকে অবগত করে রাখা।

বিশেষ করে, মেয়েদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই জরুরি যে, যেকোনো সমস্যাই তারা যেন তাদের বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করেন এবং সেইসাথে নিজের বন্ধু বান্ধবদেরও বাবা-মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

এক্ষেত্রে, কন্যা সন্তানদের সমস্যা নিয়ে বাবা-মায়ের বিশেষ যত্নশীল হওয়াও উচিত।

আর কর্মজীবী নারীদের উচিত তার অফিসের পরিবেশ সম্পর্কে, অফিসে তারঁ যেসকল সহকর্মীরা রয়েছেন তাদেঁর সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের (বাবা, মা, ভাই কিংবা স্বামী) অবহিত করে রাখা।

২. ধর্ষণ কখনই শুধুমাত্র মেয়েদের সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক সমস্যা এবং এই সমস্যাকে দূর করতে হলে সমাজের পুরুষদেরই সবচেয়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। একটি মেয়ের দায়িত্ব শুধু তার পরিবারের নয়, বরং এই সমাজের বটে।

পুরুষদের গঠনমূলক আচরনই পারে ধর্ষনের মতো ঘৃণ্য ঘটনাকে প্রতিরোধ করতে, প্রতিহত করতে।।

৩. বয়ঃসন্ধির কিছু সময় আগে থেকে ছেলে-মেয়েদের যৌনবিষয়ক শিক্ষা দিতে হবে যেন তারা যৌনতার অপব্যবহার না করে।

আমি উপরের আলোচনায় বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনের কিছু অংশ তুলে ধরেছিলাম। যেখানে ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহিরিন এর একটি সাক্ষাৎকার ছিলো।।

যে সাক্ষাৎকারটিতে তিনিও মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের যৌনশিক্ষা দেয়ার এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

যৌনতা সম্পর্কে ছেলে-মেয়েদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে  তাদের সঠিক ব্যাপারে অবহিত করাও কিন্তু পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।।

৪. এবার আসি পোশাকের কথায়।।

আজকাল মেয়েদের যৌন হয়রানি সম্পর্কিত বিভিন্ন নেতিবাচক ঘটনায় বারবারই কিছু মানুষ মেয়েদের পোশাককে দায়ী করে।

মনোবিদ নিকোলাস গ্রোথ বিভিন্ন ধরনের ধর্ষণ নিয়ে বর্ণনা করেছেন। তাঁর বিস্তারিত ভাবে করা একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে কটুক্তি ভিক্টিমকেই দোষারোপ করা; এগুলো যৌন সহিংসতাকে আরো উষ্কে দেয়। (উইকিপিডিয়া)

পোশাক যার যার ব্যক্তিস্বাধীনতা। পোশাক কখনোই খারাপ অর্থ বহন করে না, খারাপ আমাদের চিন্তা-ভাবনায় প্রতিফলিত হয়। আমাদের নিচু মন মানসিকতার জন্যে আমরা এখনো এধরনের নোংরা জঘন্যতম ঘটনা ঘটলে আগে ডালা কুলা পেরে সেই ভিক্টিম নারীর পোশাক, তার চরিত্র নিয়ে বিশ্লেষণে বসি। আচ্ছা, যখন ঢাকার ওয়ারিতে সাত বছরের শিশু সায়মাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, তখন সেক্ষেত্রে পোশাক নিয়ে আমরা কি বলবো? ও তো সাত বছরের শিশু। ওর প্রতি কিভাবে ধর্ষকের লকলকে ঘৃণ্য লালসা জেগে ওঠে? যখন, এক বছরের শিশু, দুই বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তখন সেই শিশুর পোশাক নিয়ে আমরা কি বলবো।

আমরা ভিক্টিম নারীর পোশাকের দোষ খুজতেঁ গিয়ে  ভিক্টিমের বাকি অর্ধেক মান সন্মানটুকুর চূড়ান্ত স্তরে পৌছেঁ দেয়। আর ততক্ষণে সেই অপরাধী তার পালানোর পথটুকু বের করে ফেলে।।

পোশাক কখনই ধর্ষণের কারন হতে পারে না। কোনভাবেই পারে না। পোশাককে যদি আমরা ধর্ষণের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করি তবে হয়তো আমরা নামের ওয়াস্তেই শিক্ষিত হয়েছি কিন্তু স্বশিক্ষিত হইনি।

৫. ঘর থেকে যখনই কোনো মেয়ে বের হবে, তখন অবশ্যই তার নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়েই বের হওয়া উচিত। চোখ কান খোলা রেখেই পথচলা উচিত।

এক্ষেত্রে কিছু প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদের মোবাইল নম্বর জেনে রাখা, সরকারের জরুরি হেল্পডেস্কের নম্বর সেভ রাখা। যাতে জরুরি মূহুর্তে তাতে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

এছাড়াও এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল প্রযুক্তির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এ্যাপস মোবাইলে ইন্সটল করে রাখা। যাতে জরুরি মূহুর্তে সেগুলো ব্যবহার করা যায়।  

কাছের মানুষদের কনটাক্ট নিজের কাছে রাখা উচিত।

যেকোনো সমস্যা সমাধানের সামর্থ্য আপনার আছে নিজের উপর আস্থা রাখুন।।

আত্নবিশ্বাস যেকোনো প্রতিকূল সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে।

আর ভয় নিজেকে ভিক্টিমে রূপান্তর করে— এই কথাটা প্রতিটি মেয়েরই মনে রাখা উচিত।

গত ৮ ই জুলাই সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ধর্ষণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,

ধর্ষণ প্রতিরোধে যা যা করার দরকার বা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার হলে সরকার তা–ই করবে। ধর্ষকদের শাস্তি দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর বলেও জানান তিনি।

গত ৫ই জুলাই শুক্রবারের সবথেকে ঘৃণ্যতম খবর  ছিল রাজধানীর ওয়ারীতে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া শিশু সায়মার ঘটনাটি।।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু সায়মার এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন— অপরাধীকে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করেছে এবং সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। ধর্ষণের মতো জঘন্যতম কাজ যারা করে, তারা মানুষ না। সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, দুর্ভাগ্য হচ্ছে ধর্ষণ সব সময় সব দেশে আছে। তবে এখন মেয়েরা সাহস করে কথাটা বলে। একটা সময় সামাজিক লজ্জার কারণে বলতে পারত না।

ধর্ষণ রোধে পুরুষ সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুরুষ সমাজকেও বলব, ধর্ষণটা তো পুরুষ সমাজ করে যাচ্ছে, পুরুষ সমাজেরও একটা আওয়াজ তোলা উচিত। খালি নারীরাই চিৎকার করে যাবে নাকি?  নির্যাতিত হয়ে সব চিৎকার করবে আর নির্যাতনকারীর স্বজাতি যারা আছে তাদেরও এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত বলে মনে করি।”

ধর্ষণের পরবর্তী করণীয়ঃ-

জার্মানির বিখ্যাত গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ   নিয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় বেশ কিছু ‘উপদেশ’ দেওয়া হয়েছে৷ সেগুলি হলো –

১. ধর্ষণের পর একা থাকবেন না, কোনো বান্ধবী বা আত্মীয়ার সাথে যোগাযোগ করতে হবে, ঘটে যাওয়া ধর্ষণ নিয়ে কথা বলতে হবে এবং তাঁর সাহায্য নিতে হবে।

২. গোসল, খাওয়া-দাওয়া, ধূমপান, বাথরুম যাওয়া – সম্ভব হলে এ সব বন্ধ রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে চলে যান৷ অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুছে যাবার আগেই ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।

৩. হাসপাতালে যাওয়ার পর যদি ‘এমারজেন্সিতে’ কারো সাথে এ বিষয়ে কিছু বলতে না চান, তাহলে শুধু ‘‘আমাকে এক্ষুনি একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে’ – এ কথা বললেও চলবে৷

৪. নিজেকে দোষী ভাববেন না৷ কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে, শুধু সে একাই এর জন্য দায়ী, এর জন্য অপরাধী৷ আপনি নন৷

ধর্ষণের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে অবশ্যই একজন ভিক্টিমের উচিত তার পরিবারের সদস্যদের অথবা নিভর্রযোগ্য কাউকে খোলাখুলিভাবে বিষয়টি জানানো। যাতে তারা নির্যাতিতাকে মানসিকভাবে সাহস দিতে পারেন।

তারপর সাক্ষী হিসেবে কাজে লাগানো যায় এমন কোনো বিশ্বস্ত মানুষকে জানানো সে আত্মীয়, বন্ধু, পুলিশ, চিকিৎসকও হতে পারেন।

৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভিক্টিমকে অবশ্যই ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে ফেলতে হবে।

কোনোভাবেই নির্যাতিতাকে গোসল করে আলামত নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। তাতে শারীরিক আলামতগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

সবচেয়ে দ্রুত যে কাজটি করতে হবে তা হলো নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে হবে। পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। অভিযোগ যে কেউ করতে পারেন।

যিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনিই মামলার প্রধান সাক্ষী। তাঁর জবানবন্দি পুলিশকে গ্রহণ করতে হবে। তবে কোনো ধরনের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি ( ভিক্টিম) বাধ্য থাকবেন না।

বাংলাদেশের অনেক দরিদ্র পরিবারগুলোতে এই সমস্যাটা হয় যে, ভিক্টিম লজ্জায় এধরনের ঘটনা চেপে যেতে চায় অথবা ভিক্টিম যদি আর্থিকভাবে দুর্বল হয় সেক্ষেত্রে মামলা মোকদ্দমাকে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে হবে এবং তা বিনামূল্যে দিতে হবে। পরবর্তী চিকিৎসাও সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে হবে।

আইনি সহায়তা পাওয়া নিয়েও ভয়ের কিছু নেই। কারণ :—

এক্ষেত্রে প্রথমেই ভিকটিম পুলিশের কাছ থেকে সব রকম সহায়তা পাওয়ার অধিকারী। জেলা জজের আওতায় প্রতিটি জেলায় আইন সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে আবেদন করলে ভিকটিম আর্থিক সহয়তা অথবা আইনজীবীর সহায়তা পেতে পারেন।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছ থেকে শেল্টার, আইনগত সহায়তাও পেতে পারেন।

থানায় এবং হাসপাতালে ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ আইনগত  চিকিৎসাও পেতে পারেন।

এখানে আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হচ্ছে—- ধর্ষণ পরবর্তীতে আপস-মীমাংসা করা। ভিক্টিম কে কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের ডেকে ধর্ষক কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা প্রভাবশালী কোন মহল দ্বারা চুপিচুপি  আপস-মীমাংসার কাজটি করে ফেলেন।

এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে অবশ্যই সোচ্চার হতে হবে।

কখনো কোনো ধর্ষণের ঘটনায় আপস-মীমাংসা করা যাবে না। কারণ ধর্ষকের পরিচয় সে একজন ধর্ষক। তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

আজকে আমি বা আপনি তার সঙ্গে আপস করলে সে কালকেই আরেকজনকে ধর্ষণ করবে। কোনোভাবেই কোনো ধর্ষককে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সে নানা রকম ভয় দেখাতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সে অপরাধী তার শক্তি কোনোভাবেই আপনার চেয়ে বেশি নয়।

এক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—   দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন;

যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর আমরা কিন্তু কেউই তা পরিবর্তন করতে পারি না।

কিন্তু একটু ভেবে দেখুন এজন্য আমরা আমাদের জীবনকে তো থামিয়ে দিতে পারি না।

একজন ধর্ষিতার সবসময় মনে রাখা উচিত সে অন্যের অন্যায়ের শাস্তি কখনোই নিজেকে দেবে না।

একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটার জন্য আমাদের সমাজের সবার এটা মনে রাখা উচিত কখনোই একটা মেয়ে দোষী নয়। প্রথমেই আমরা যে ভুলটা করি, তা হলো আমরা ভুলে যাই আমরা একজন ভিক্টিমের এইধরনের দুর্ঘটনার জন্য তাকেই দোষারোপ করছি, যা মোটেই যৌক্তিক নয়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে একজন মেয়ে বা কন্যা সন্তান তার জীবনের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। সুতরাং তার বেঁচে থাকার জন্য আশপাশের মানুষের একটু সহানুভূতির প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—

ভিক্টিমের পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীরা যেন তার সাথে দূরত্ব বজায় না রেখে একটা স্বাভাবিক পরিবেশ রাখে এবং তা প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষেরও নিশ্চিত করা উচিত।

ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই সমাজের আরেকটি নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে—-

    “ভিক্টিম এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কটুক্তি করা”।।

ভিক্টিমের বাবা-মা, ভাই-বোন যেন সমাজে চলতে কোনপ্রকার কুন্ঠাবোধ না করে সেজন্য আমাদের উচিত তদের নিয়ে কটুক্তি না করা বরং খারাপ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো।

আমাদের উচিত অপরাধীকে লজ্জা দেওয়া, তাকে শাস্তির আওতায় আনা, ভিক্টিমকে নয়।

পরিশেষে বলবো—

প্রিয় পাঠক, ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য, নিন্দনীয় ও জঘন্যতম ঘটনার একটা নাতিদীর্ঘ বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন আমি প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি, একটাই উদ্দেশ্যে—-

  আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজ বা টিভি খুললেই একটা খবর প্রায়ই নিয়ম করে দেখতে পাই আর তা হচ্ছে— এই ধর্ষণ।

প্রিয় পাঠক, এটা কোনভাবেই ভালো খবর না বা নীতিশিক্ষামূলক খবর না যে প্রতিদিন শুনতেই হবে।।

কিন্তু, দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে — বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের মতো এই জঘন্য ও পৈশাচিক অপরাধ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে—

না চাইলেও আমাদের এই দেশের মানুষকে প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের কথা শুনতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই শোনা যাছে—

এই দেশের কোন না কোন এক মেয়ের, কারো কন্যার কিংবা কোন এক বোনের হাহাকার, আর্ত চিৎকার।। এই দেশের আকাশ বাতাস এই চিৎকার শুনতে শুনতে ভারী হয়ে উঠেছে।।

ধর্ষণের শিকার হয়ে তনু মরেছে, ফেনীর রাফি মরেছে, আর গত ৫ জুলাই মরলো সাত বছরের  ছোট্ট সামিয়া।।

 

এবার আমাদের সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভংগী বদলাতে হবে। যারা এধরণের পৈশাচিক কাজে জড়িত তাদের দেশে প্রচলিত যথাযোগ্য আইনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

নাহলে, যে হারে বাংলাদেশে ধর্ষণের মতো ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে তাতে মনে হয় — ধর্ষণের দিক থেকে এই এক লক্ষ সাত চল্লিশ হাজার পাঁচশ সত্তর বর্গমাইলের ছোট্ট দেশটি একদিন ধর্ষণের দেশ হিসেবে সবার উপরে অবস্থান করবে। যা হবে আমাদের জন্য সত্যি লজ্জার, অপমানের আর মাথা নিচু করে দেবার। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই সোনার বাংলাদেশ কলুষিত দেশের তালিকায় নাম লেখাক তা আমাদের কারোর ই কাম্য নয়। আমরা কখনোই তা চাইনা।

 

 

ছবিঃ গুগল হতে  সংগৃহীত

তথ্য সূত্রঃ

১. https://www.google.com/amp/s/amp.dw.com/bn/%25E0%25A6%25A7%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B7%25E0%25A6%25A3%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%2593%25E0%25A7%259F%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BE-%25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BE-%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25A3%25E0%25A7%2580%25E0%25A7%259F/a-17997810

২.https://www.google.com/amp/s/www.ntvbd.com/law-and-order/58365/%25E0%25A6%25A7%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B7%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A4-%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A5%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25AD%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25A3%25E0%25A7%2580%25E0%25A7%259F/আম্প

৩.https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1603245/%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8

৪. https://www.google.com/amp/s/www.channelionline.com/amp/%25E0%25A6%25A7%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B7%25E0%25A6%25A3-%25E0%25A6%2593-%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2580-%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%2580%25E0%25A7%259C%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%2595%25E0%25A7%258B%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%258B-%25E0%25A6%25A6/

৫.https://www.bd-pratidin.com/first-page/2019/04/20/417477

৬.http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_sections_detail.php?id=835&sections_id=32528

৭.http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_sections_detail.php?id=835&sections_id=32528

৮. https://www.google.com/amp/bangladesherkotha.com/2019/04/13/201409/%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2582%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B6%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%2587%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%25A7%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B7%25E0%25A6%25A3-%25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25AE/আম্প

৯.https://roar.media/bangla/main/awareness/rape-and-rape-punishment-in-the-context-of-bangladesh/

১০.https://www.bbc.com/bengali/amp/news-48904836

১১.https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AF%E0%A7%8C%E0%A6%A8_%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0_%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3

১২.https://www.bhorerkagoj.com/print-edition/2017/05/09/145156.পিএইচপি

১৩.https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%A6

১৪. ধর্ষণঃ উইকিপিডিয়া

spot_img

আরও পড়ুন

রোনালদো–মেসির পথে হাঁটতে চান হালান্ড

ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড বলেছেন, ফুটবলে দীর্ঘ...

শীতে সোয়েটার ভালো রাখতে মানতে হবে যে নিয়ম

শীতের মৌসুম এলেই আলমারি থেকে বের হয় সোয়েটার, মাফলার,...

রাশিয়ায় দায়িত্ব পালন করা সেনাদের বীরত্বের প্রশংসা কিমের

রাশিয়ায় দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরে আসা উত্তর কোরিয়ার...

অ্যাভাটার ৩-এর সুরে সাত বছরের পরিশ্রম

প্রযুক্তি, ভিজ্যুয়াল আর কল্পনার জগৎ নির্মাণে অ্যাভাটার সিরিজ যে...

যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় থামেনি শিশু হত্যার খবর

অক্টোবর মাসে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর থেকেও গাজায় সহিংসতা...

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও সীমান্তে গোলাগুলি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার...

সামনে আরও কমতে পারে তাপমাত্রা

টানা তিন দিন ধরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ...

হাদিকে গুলির প্রতিবাদে সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ...

দুর্নীতির অভিযোগে ভারতের ৪ ক্রিকেটার বরখাস্ত

ক্রিকেটে দুর্নীতির অভিযোগে ভারতের চারজন ঘরোয়া ক্রিকেটারকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত...

মাথায় গুলিতে ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি, লাইফ সাপোর্টে হাদি

মাথায় গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র...

গুলির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি জামায়াত আমিরের

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তফসিল ঘোষণার...

পাঁচ দশক পরও দাপুটে নায়ক—রজনীর গল্প

সংবাদের মূল অংশভারতের সিনেমায় রজনীকান্ত এমন এক নাম, যার...

ঐশ্বরিয়ার পর একই কারণে এবার আদালতে সালমান

বলিউড সুপারস্টার সালমান খান এবার আদালতে গেছেন নিজের পরিচয়...

কঠিন সময় পেরিয়ে রাজ নিধুমুরুর সঙ্গে নতুন জীবনে সামান্থা

টলিউড তারকা সামান্থা রুথ প্রভুর ব্যক্তিজীবন নিয়ে নতুন করে...
spot_img

আরও পড়ুন

রোনালদো–মেসির পথে হাঁটতে চান হালান্ড

ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড বলেছেন, ফুটবলে দীর্ঘ সময় শীর্ষ পর্যায়ে টিকে থাকার ক্ষেত্রে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসিই তাঁর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।...

শীতে সোয়েটার ভালো রাখতে মানতে হবে যে নিয়ম

শীতের মৌসুম এলেই আলমারি থেকে বের হয় সোয়েটার, মাফলার, টুপি ও উলের জ্যাকেট। দিনের বেলায় অনেক সময় হালকা সোয়েটশার্টই যথেষ্ট হলেও সকালের ঠান্ডা বা...

রাশিয়ায় দায়িত্ব পালন করা সেনাদের বীরত্বের প্রশংসা কিমের

রাশিয়ায় দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরে আসা উত্তর কোরিয়ার একটি সেনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। শনিবার উত্তর...

অ্যাভাটার ৩-এর সুরে সাত বছরের পরিশ্রম

প্রযুক্তি, ভিজ্যুয়াল আর কল্পনার জগৎ নির্মাণে অ্যাভাটার সিরিজ যে সিনেমার ভাষা বদলে দিয়েছে, তা বহু আগেই প্রমাণিত। এবার সেই সিরিজের তৃতীয় ছবি অ্যাভাটার: ফায়ার...
spot_img