Home সাহিত্য গল্প দুইটি অণুগল্প – সালমান সা,দ

দুইটি অণুগল্প – সালমান সা,দ

0

অনুগল্প-১
সুবোধের হাতে জান্নাতের টিকিট

একদল ছেলে আর কিছু মেয়ে। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে এবং ধর্মীয় দায়িত্ব মনে করছে একটা ছেলেকে এটা প্রমাণ করা-
সে চর! সে দালাল! সে কুলাঙ্গার!  সে নাস্তিক!
একটা সুবোধ এসে তাদের গালপারা মুখে হাত চেপে ধরে স্রোতের মতো ধেয়ে আসা নিন্দাবাজীতে বাধ সাধতে চাইলো।
সেই কিছু মেয়ে এবং ছেলের সে দলটি সুবোধকেও অভিধা দিলো-
তুমি চর! তুমি দালাল!  তুমি পথভ্রষ্ট!
তারা তাকে বিনামূল্য জাহান্নামের একটা টিকিট ধরিয়ে দিলো।
সুবোধ ঘুরে গিয়ে আবার ফিরে আসলো। তাদের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে গালি দিলো-
সে চর! সে দালাল!  সে কুলাঙ্গার!  সে নাস্তিক!
এবারে তারা স্বস্তি পেলো। সুবোধের সহি বুঝ এসে গেছে বলে। এবং সঠিকপথে ফিরে আসার আনন্দে বুকে জড়ালো। আর দিয়ে দিলো জান্নাতের একটা টিকিট।
ওপারে, দূরে বহুদূরে সাত আসমানের ওপর থেকে পূতাত্মা ফেরেশতার দল আদমের পুত্রদের এহেন কারবার দেখে   মুখ টিপে শ্লেষের হাসি হাসছে।

অণুগল্প-২
পথের পাচাল
গল্পিতা

নিরুদ্দেশ হাঁটছি। এ হাঁটার কোন লক্ষ্য নেই। এ হাঁটার কোন গন্তব্য নেই।শুধু হাটা।পথ দেখা। পথের মানুষদের দেখা।এখানেওখানে নানানরকম জটলা। ইচ্ছে হলেই কোন জটলায় ঢুকে পড়া। চোখের সামনে যাই পড়ুক, থমকে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখা। গভীর চিন্তাভাবনায় ডুবে থাকা। এ হাটার ভঙ্গি পায়চারি করার মত।
বাসা থেকে ঝগড়া করে বেরিয়ে মাঝেমধ্যে আমি এমন হাটি। আমার মনে হয়, এমন নিরুদ্দেশ হাটায়  লাভ আছে।

সেদিন সন্ধের পর। মাগরিবের আজান পড়তে একটা খেলার মাঠ নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর।
আমি আমার মনের মধ্যে ডুবে থেকে পায়চারী করে বেড়াচ্ছি মাঠজুড়ে। বালুর ভেতর জুতা ডাবাচ্ছি। আবার ঝেড়ে ধুলা সরাচ্ছি। পায়ের পাতায় দূর্বাঘাসের তুলতুলে ঠাণ্ডা স্পর্শ নিচ্ছি।
একটু দূরে একদল ছেলে দেখলাম একটা খেলা খেলছে। সবার বয়স সাত থেকে তেরোর ভেতর।
একটা ছেলে উবুড় হয়ে দাঁড়ায়। নামাজে রুকু করার মতো।
তার পিছে সাত-আটজনের লাইন।
একে একে তারা ছেলেটার পিঠের ওপর দিয়ে দারুণ একটা কায়দায় লাফ দিয়ে পার হচ্ছে।

আমি কাছে গেলাম।  ওদের কথাবার্তা  গতিবিধি আচরণ  কাছ থেকে দেখার জন্য।
একটা ছেলে বললো, ও উবুড় হওয়া ছেলেটার পিঠ টপকে যেতে পারবে না।  তখন ওদের মধ্যে লিডারগোছের ছেলেটা বললো,
‘কিরে! তোর তো আমাগো লাহান বাসি ভাত খাইতে হয় না! তোরা গরমভাত খাস!
তোর গায়ে তো শক্তি বেশি হওনের কথা।’

বাসি  ভাত! গরম ভাত! ভাতেরও যে  এইরকম কোন তফাত থাকে জানতাম না।
এসিরুমে বসে স্মার্টফোনে স্মার্ট সময় কাটানোই আমার জীবন।
পাটে সন্ধ্যা নামার মতো এক আকাশ বিষাদ নেমে এলো আমার মনে।

এদিকে গরম ভাত খেতে পারাও কারো কারো কাছে বলার মতো একটা ব্যাপার!

লেখা – সালমান সাদ

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version