ঢালিউডের অমর অভিনেতা সালমান শাহর মৃত্যু প্রায় তিন দশক পরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে নতুন ধারা তৈরি করা এই তারকা ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে রহস্যের অন্তরালে থাকা এই মৃত্যুর ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে সম্প্রতি।
সালমান শাহর মৃত্যুর পর রমনা থানায় প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। তবে ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক বাদীপক্ষের করা রিভিশন মঞ্জুর করেন এবং মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এর পরদিন (২১ অক্টোবর) সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম রমনা থানায় নতুন করে মামলা দায়ের করেন। এতে সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়, যার মধ্যে খল অভিনেতা আশরাফুল হক ডনও রয়েছেন।
আদালতের নির্দেশনায় আসামিদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর মধ্যে ডন জানান, তিনি পালিয়ে যাননি; বরং শিগগিরই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। তিনি বলেন, ‘সবাই বলছে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ৩০ বছর পালাইনি, এখন পালাব কেন? আমি বাসাতেই আছি। দু-এক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করব। ৩০ বছর ধরে যন্ত্রণা ভোগ করছি, এখন এর একটা সুরাহা দরকার।’
ডন তার অভিনেতা জীবনের স্মৃতি মনে করে বলেন, ‘যে চলচ্চিত্র ভালোবেসে ঘর ছেড়েছি, সেই সিনেমাতেই সালমান ভাইয়ের সঙ্গে জুটি গড়েছিলাম। মা-বউয়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষটির সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছি। কিন্তু তাকে ভালোবেসেই আমার ক্যারিয়ারের বারোটা বেজেছে। আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘সালমানকে ভালোবেসে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে, আমি করিনি— এটাই কি আমার অপরাধ? ওপরে একজন আছেন, তিনি সব দেখেন। একদিন সত্য প্রকাশ হবেই, তবে আমি সেদিন দেখে যেতে পারব কি না জানি না।’
ডন স্মৃতিচারণে বলেন, মৃত্যুর আগে তিনি সালমান শাহর সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেছেন। ‘৩০ আগস্ট আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসি। সালমান বলেছিল, পরিচালক শিবলী সাদিক ভাইকে জানাতে যে সে ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে আনন্দ অশ্রু ছবির শুটিংয়ে অংশ নেবে। আমি খবরটা পৌঁছে দিই। দুই দিনের ফাঁকে ভাবলাম বগুড়ায় ঘুরে আসি, কিন্তু বাস ধর্মঘটের কারণে ঢাকায় ফিরতে পারিনি। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর ঝড়ের মতো খবর এল— সালমান শাহ আর নেই।’
নব্বইয়ের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান শাহ ছিলেন এক ধূমকেতু। মাত্র সাড়ে তিন বছরের অল্প ক্যারিয়ারে তিনি কোটি দর্শকের হৃদয় জয় করেছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যু বাংলাদেশের সিনেমা ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ট্র্যাজেডি হিসেবে চিহ্নিত। সালমান শাহর স্মৃতি এখনও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে অমলিন রয়েছে, এবং ডনের সাক্ষাৎ ও মন্তব্য নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।
সিএ/এমআর


