বলিউডে এমন অনেক তারকা আছেন, যাঁদের পেছনে কোনো প্রভাবশালী পরিবার বা চলচ্চিত্র-ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তবুও কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য আর প্রতিভার জোরে তাঁরা জায়গা করে নিয়েছেন দর্শকের হৃদয়ে। সেই তালিকায় অন্যতম নাম কৃতি শ্যানন। আজ তিনি বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের একজন হলেও তাঁর এই যাত্রাপথ মোটেও সহজ ছিল না।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) প্রকাশ্যে আসা বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও তথ্য অনুযায়ী, ক্যারিয়ারের শুরুতে কৃতিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি চরিত্র থেকে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, তাঁর চেহারা ‘অতিরিক্ত সুন্দর’, যা নাকি পর্দার বাস্তব চরিত্রের সঙ্গে মানানসই নয়। এই মন্তব্য একসময় তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দিলেও শেষ পর্যন্ত সেটিই তাঁর এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হয়ে ওঠে।

দিল্লিতে জন্ম নেওয়া কৃতি শ্যানন প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করছিলেন। তবে ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিং শুরু করেন তিনি। অবশেষে ২০১৪ সালে টাইগার শ্রফের বিপরীতে ‘হিরোপন্তি’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় কৃতির। প্রথম ছবিতেই তাঁর আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি ও সাবলীল অভিনয় দর্শক ও নির্মাতাদের নজর কাড়ে।
এরপর একে একে ‘বেরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’, ‘হাউসফুল ৪’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে প্রমাণ করেন কৃতি। বাণিজ্যিক ঘরানার পাশাপাশি চরিত্রনির্ভর ছবিতেও সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন বলিউডের বহুমুখী অভিনেত্রী হিসেবে।

২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মিমি’ সিনেমা কৃতির ক্যারিয়ারে বড় মোড় এনে দেয়। একজন সারোগেট মায়ের চরিত্রে তাঁর সংবেদনশীল অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়। এই ছবির জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন, যা তাঁকে ভারতের শীর্ষ অভিনেত্রীদের কাতারে নিয়ে যায়।
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃতি শ্যানন বলেন, ‘সংগ্রামের সময় অনেক দিন ছিল, যখন আমি হতাশ হতাম, কাঁদতাম। কেউ কেউ বলত—“তুমি বেশি সুন্দর।” পর্দায় বাস্তব দেখাতে হলে তোমার মধ্যে কিছু অসম্পূর্ণতা থাকা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কথাগুলো শুনে মন খারাপ হতো, কিন্তু কিছু মানুষ ছিলেন যাঁরা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। সেই বিশ্বাসই আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।’
২০১৫ সালে শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘দিলওয়ালে’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে কৃতি আরও বেশি আলোচনায় আসেন। বর্তমানে সিনেমা ও বিজ্ঞাপন মিলিয়ে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৮২ কোটি রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১০ কোটি টাকা। আয়ের বড় একটি অংশ আসে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনী চুক্তি থেকে।

আগামী দিনে কৃতিকে দেখা যাবে ধানুশের বিপরীতে ‘তেরে ইশ্ক মে’ সিনেমায়। একসময় শুধুমাত্র ‘বেশি সুন্দর’ হওয়ার কারণেই যাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই কৃতি শ্যানন আজ নিজের প্রতিভা, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের জোরে বলিউডে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।
সিএ/বিই


