দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকা বা তার বেশি জমা থাকা হিসাবের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আর্থিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও চলমান মূল্যস্ফীতির মাঝেও বড় অঙ্কের হিসাব বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এমন হিসাবের সংখ্যা এক লাখ ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেক ক্ষেত্রে সঞ্চয় ভাঙছেন। ফলে ছোট অঙ্কের আমানত কমছে। বিপরীতে সমাজের একটি শ্রেণির আয় বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। বড় অঙ্কের নতুন হিসাবের বেশিরভাগই বিত্তশালী ব্যক্তি ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দখলে। তাদের মতে, অর্থনৈতিক চাপ থাকলেও সম্পদশালী মানুষের আয়-সম্পদ বৃদ্ধির ধারা তেমন বাধাগ্রস্ত হয়নি। ব্যাংকে বড় অঙ্কের সঞ্চয় বাড়ায় সেটিই প্রতিফলিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনেও এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কেবল ধনী ব্যক্তির হিসাব নয়। এ তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও রয়েছে হাজারো প্রতিষ্ঠানের হিসাব। একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একাধিক ব্যাংকে একাধিক হিসাবও রাখে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানেও কোটি টাকার জমা রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাব সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি। চলতি বছরের জুন শেষে সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। তিন মাসে মোট হিসাব বেড়েছে ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৯টি।
জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা হিসাব ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি, যা সেপ্টেম্বর শেষে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০টি। অর্থাৎ তিন মাসে হিসাব বেড়েছে ৭৩৪টি।
তবে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়লেও জমা টাকার পরিমাণ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে এসব হিসাবে জমা ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ তিন মাসে কমেছে ৫৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।
বিবিএসের দীর্ঘমেয়াদি তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন মাত্র ৫ জন। ১৯৭৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। ১৯৮০ সালে ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন এবং ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালে হিসাব সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে হিসাব হয় ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৮ হাজারে।
সিএ/ইরি


