বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) প্রবিধান, ২০২৫-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। এটি নতুন ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস অ্যাক্ট, ২০২৪’-এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খসড়া প্রকাশের মাধ্যমে জনমত গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের পরামর্শের ভিত্তিতে একটি কমিটি চূড়ান্ত প্রবিধান প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করবে।
খসড়া অনুযায়ী, প্রতিটি পিএসওকে প্রতিদিনের শেষে তাদের ট্রাস্টেড সিএকাউন্টে (টিএসএ) পর্যাপ্ত ব্যালান্স রাখতে হবে, যাতে সব বকেয়া মার্চেন্ট লায়বিলিটি কাভার হয়। টিএসএ’তে কোনো ঘাটতি দেখা দিলে প্রতিষ্ঠানকে ৩০ লাখ টাকা বা বিদ্যমান স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) বর্তমান রেট ১১.৫০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সেই হারে জরিমানা করতে হবে। এই দায়িত্ব শুধু প্রতিষ্ঠানকেই নয়, পরিচালক, সিইও ও ট্রেজারি কর্মকর্তাদেরও ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে। ১৪ দিনের বেশি ঘাটতি থাকলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ হবে।
পিএসও হিসেবে লাইসেন্স পেতে প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর অধীনে নিবন্ধিত হতে হবে এবং মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনে পেমেন্ট সেবা প্রদানের বিষয়টি স্পষ্ট থাকতে হবে। লাইসেন্স প্রক্রিয়া দুই ধাপে সম্পন্ন হবে—প্রথমে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) এবং পরে মূল লাইসেন্স। আবেদন ফি ৫০ হাজার টাকা এবং লাইসেন্স ফি ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। লাইসেন্স পাওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
প্রদত্ত সেবার ধরন অনুযায়ী মূলধনের পরিমাণও ভিন্ন হবে। ডিজিটাল মার্চেন্ট অ্যাকোয়ারিং সেবার জন্য ন্যূনতম ১ কোটি টাকা এবং এটিএম বা সিআরএম সেবার জন্য ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন বাধ্যতামূলক। এছাড়া মার্চেন্ট অ্যাকোয়ারিং ও পেমেন্ট ইনিশিয়েশন সেবায় গত ১২ মাসের গড় মাসিক লেনদেনের ০.৩ শতাংশ সমপরিমাণ কার্যকর মূলধন রাখা হবে। সুইচিং, এটিএম ও কার্ড স্কিম সেবার জন্য এই হার ০.১ শতাংশ।
প্রতিটি পিএসওতে অন্তত পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ থাকতে হবে, যার দুই-তৃতীয়াংশ নন-এক্সিকিউটিভ পরিচালক এবং চেয়ারম্যানও নন-এক্সিকিউটিভ হতে হবে। পর্ষদ সদস্যদের কমপক্ষে পাঁচ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তারা ঋণখেলাপি হতে পারবেন না বা অন্য কোনো পিএসওতে একযোগে পদে থাকতে পারবেন না।
সিইও হতে হলে স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন এবং ফিন্যান্স, পেমেন্ট, ফিনটেক, আইটি বা টেলিকম খাতে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে দুই বছর সিনিয়র নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। নিয়োগের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন, প্রার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই, শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই এবং সিআইবি রিপোর্ট বাধ্যতামূলক।
পিএসওগুলোকে সব মার্চেন্টের কেওয়াইসি যাচাই করতে হবে এবং লিখিত নিষ্পত্তি চুক্তি রাখতে হবে। বিক্রির অর্থ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। নগদ নিষ্পত্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এটিএম ও সিআরএম বুথ নিরাপদ এবং সহজপ্রবেশযোগ্য স্থানে স্থাপন বাধ্যতামূলক। শহরে ১২ ঘণ্টা ও গ্রামে ২৪ ঘণ্টার বেশি ডাউনটাইম চলতে পারবে না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
প্রতিটি পিএসওকে তারল্য, পরিচালন, কাস্টডি, জালিয়াতি ও অর্থপাচার ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। পর্ষদ ঝুঁকির সহনশীলতা নির্ধারণ করবে এবং ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন ও তদারকি করবে।
স্পন্সর শেয়ারহোল্ডাররা প্রথম পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবেন না। গ্রাহকদের ওপর চার্জ আরোপের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন। সব লেনদেনের তথ্য অন্তত ১২ বছর সংরক্ষণ করতে হবে। বড় ধরনের পরিচালনাগত ত্রুটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবং তথ্য ফাঁস বা ডেটা লঙ্ঘনের ঘটনা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট করতে হবে।
সিএ/এমআরএফ


