দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ায় সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশের মান অনুযায়ী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে। পাইকারি বাজারে একই সময়ে দাম ৯৫ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যে থাকছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দাম বৃদ্ধির মূল কারণ মৌসুম শেষে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং ভারত থেকে আমদানির অনুমতি বন্ধ থাকা। এর ফলে বাজারে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি, কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দামের উর্ধ্বগতি নিশ্চিত করছে।
ঢাকার গুদারাঘাট কাঁচা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রিপন মিয়া জানান, ‘গতকাল ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি, আজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারের দামই আমাদের বিক্রির মূল ভিত্তি।’ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও রাজশাহীর পাইকারি ব্যবসায়ীরাও একই অভিযোগ করেছেন।
দেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ২৭ লাখ টন, যেখানে দেশি উৎপাদন প্রায় ২১ লাখ টন। বাকি প্রয়োজনীয় ৬ লাখ টন আমদানি করতে হয়। তবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেনের মতে, এই উৎপাদন বিবেচনায়, বর্তমানে আমদানের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, ‘বাজার তদারকির দুর্বলতার কারণে দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। বর্তমানে স্টক যথেষ্ট থাকায় চাহিদা পূরণ সম্ভব।’
কৃষকরা জানিয়েছেন, এই বছর উৎপাদন শুরু কিছুটা দেরিতে হওয়ায় নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে সময় লাগছে। রাজবাড়ীর কৃষক ছোরাপ আলী বলেন, ‘প্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে রবি মৌসুমের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারি, কিন্তু এবার দেরি হয়েছে।’
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কিছুটা বাড়তে পারে। পেঁয়াজ আমদানিকারক জাহেদী বলেন, ‘সরকার যদি আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে দ্রুত বাজার স্থিতিশীল হবে।’ ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন আরও যোগ করেন, ‘সরকারের উচিত আমদানি নীতিকে সময়োপযোগী রাখা, লোকাল পণ্য থাকলে আমদানির সুযোগ সীমিত করা, আর চাহিদা বেশি হলে অনুমতি দেওয়া।’
বর্তমানে দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। ঢাকা উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজি কিনেছিলাম, আজ ১২০ টাকায় কিনতে হলো।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো, বাজারে তদারকি করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আমদানির সুযোগ রাখলে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
সিএ/এমআরএফ


