দেশের বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে, তবে খুচরা পর্যায়ে তা এখনও স্বাভাবিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। রাজধানীর শ্যামবাজার, সূত্রাপুর ও নিউমার্কেট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বিশেষ করে আমদানিকৃত চালের প্রভাবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী দামের ধারা নিম্নমুখী হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ‘মিনিকেট’ সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকায় নেমেছে, যা আগে ছিল ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। পাইজাম চালের দাম ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং কাটারিভোগ চালের দাম ১ হাজার ৭০০ টাকায় নেমেছে। নাজিরশাইল চালের দাম ২ হাজার এবং স্বর্ণা চালের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি বস্তা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মাঝারি মানের চালের দাম ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে দেশে মোট ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে সরকারিভাবে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টন।
সরকারিভাবে আমদানিকৃত চালের মধ্যে ৬ লাখ টন এসেছে ভারত থেকে, ১ লাখ টন মিয়ানমার থেকে, ১ লাখ টন ভিয়েতনাম থেকে এবং বাকি পাকিস্তান থেকে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে প্রতি টনের দাম ৩০৮ ডলার ধরা হয়েছে।
চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতের বিপুল আমদানির কারণে পাইকারি বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, ফলে দাম কমছে। শ্যামবাজারে ক্রেতা নিলয় আহমেদ জানান, “পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এখনও কমেনি। তবে পাইকারি বাজার কমেছে, তাই আশা করা যায় খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করবে।”
সূত্রাপুরের ব্যবসায়ী শেখ মো. জহির বলেন, “ভারতীয় চালের বিপুল সরবরাহ এবং দেশীয় চালের পর্যাপ্ত মজুত দাম কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক। আমন ধান উঠার পর বাজারে সরবরাহ আরও বাড়বে এবং দাম আরও কমতে পারে।” চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “প্রতিযোগিতার কারণে দাম কমেছে। আগে বড় গ্রুপ বাজার নিয়ন্ত্রণ করত, এখন যে কেউ আমদানি করতে পারছে। এর ফলে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হচ্ছে এবং সাধারণ ক্রেতা উপকৃত হচ্ছেন।”
সিএ/এমআর