ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এনসিপির একটি বড় অংশ এই সমঝোতার পক্ষে থাকলেও দলের ভেতরে ভিন্নমতও রয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতা হবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
এর আগে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় এলেও শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে কোনো বোঝাপড়া হয়নি। পরে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় এবং তা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর সঙ্গে আবারও আলোচনা হতে পারে বলে আশাবাদী এনসিপির শীর্ষ নেতারা। তাঁরা তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় তুলতে আগ্রহী। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
এনসিপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। এসব আলোচনায় এনসিপি অন্তত ৫০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। তবে জামায়াতের দৃষ্টিতে এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যেই জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আবারও আলোচনা হতে পারে।
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে এনসিপির ভেতরে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলের একটি অংশ এই সমঝোতার পক্ষে থাকলেও আরেকটি অংশের রয়েছে তীব্র আপত্তি। এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে গতকাল এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক। তিনি জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতা আবদুল কাদের দাবি করেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, শুরুতে এনসিপি ৫০টি আসন দাবি করলেও দর-কষাকষির পর ৩০টি আসনে সমঝোতা হয়েছে। এই শর্ত অনুযায়ী এনসিপি বাকি ২৭০ আসনে প্রার্থী দেবে না। গতকাল সকালে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, সবকিছু ঠিক থাকলে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) এই জোটের ঘোষণা আসতে পারে।
তবে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য নিশ্চিত করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ে গণসংযোগ করেছেন। তাঁদের বেশির ভাগের মত হলো, নির্বাচনে জয় পেতে হলে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট কিংবা সমঝোতায় যাওয়ার বিকল্প নেই। সে কারণেই জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গেও আলোচনার পথ খোলা রাখা হয়েছে। এই নেতা আরও জানান, বিএনপির প্রধান নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সরাসরি সাক্ষাতের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানান, এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে।
জোটে ভাঙনের সুর
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ে গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তখন বলা হয়েছিল, এই জোট বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তৃতীয় একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
তবে বর্তমানে এনসিপি ও এবি পার্টির বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগে ক্ষুব্ধ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুঁইয়া বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটকে তৃতীয় শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে তিন দলের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াত—উভয় দিকেই আলোচনা করে সেই বোঝাপড়া লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই তারা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাবেন বলেও জানান তিনি।
সিএ/জেএইচ


