বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম কখনোই ভিনদেশিদের দাদাগিরি মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনতাই করে নিজেদের স্বাধীনতা দাবি করে, তারা প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে না এবং বিশ্বাসও করে না।
৫৫তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে শহীদ ও আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। মহানগর দক্ষিণ জামায়াত কার্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার নানা দিক তুলে ধরেন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশের জনগণ। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ না করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে কেন আত্মসমর্পণ করেছিল? কেন সেদিন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে সেখানে রাখা হয়নি? এর একমাত্র কারণ ভারত চায়নি এবং চায় না বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। তারা আমাদের স্বাধীনতা ছিনতাই করে নিয়ে এদেশের সম্পদ লুটপাট করে নিয়েছে। তারা চেয়েছে এবং চায় তাদের সেবাদাস সরকার দ্বারা বাংলাদেশ পরিচালিত হোক। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভিনদেশিদের দাদাগিরি মেনে নেয়নি, নেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কারণে চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাই হারায়নি বরং আধিপত্যবাদ পরাজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে লুট হওয়া আমাদের স্বাধীনতা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফিরিয়ে এনেছে। এজন্য পরাজিত আধিপত্যবাদের সহযোগিতায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ জুলাই যোদ্ধাদের টার্গেট করে হত্যার ছক কষছে। এরই অংশ হিসেবে ওসমান হাদীর ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।’
ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আসলে প্রতিটি জুলাইযোদ্ধার মাথায় গুলি করার শামিল। তার ভাষায়, বিপ্লবী তরুণেরা কখনোই পরাজিত শক্তির কাছে মাথা নোয়াবে না। আধিপত্যবাদের দোসর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কবর রচনা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠলেই জাতি স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভারত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। তারা বন্ধু বেশে আমাদেরকে শোষণ করেছে। আমাদের ভূ-খণ্ডের সব সম্পদ এমনকি রেললাইনের নাট-বল্টু তারা লুট করে নিয়েছিল। যেটি মেজর জলিল নিজের লেখা বইতে উল্লেখ করে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের। এতো উন্নয়ন করলে পালানোর কারণ কী।’ তার মতে, বিগত ১৫ বছর উন্নয়নের নামে দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চলেছে। যারা পালিয়ে গেছে তারা দেশপ্রেমিক নয়, বরং যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুস সবুর ফকির বলেন, প্রতি বছর বিজয় দিবস নিয়ে আলোচনা হলেও উত্থাপিত অনেক প্রশ্নের জবাব জাতির সামনে আসছে না। এর ফলে তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে না। তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী কেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিক নায়ক জেনারেল ওসমানীর কাছে আত্মসমর্পণ না করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল—এটি ছিল গভীর চক্রান্ত। তার ভাষায়, ভারত মুক্তিযুদ্ধকালে সহযোগিতা করলেও তা ছিল নিজেদের স্বার্থে। আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা ছিনতাই করে দেশকে জিম্মি করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই জিম্মিদশা থেকে দেশকে মুক্ত করতেই তরুণ প্রজন্ম চব্বিশের বিপ্লব সংগঠিত করেছে। বিজয়ের এই দিনে কোনো অপশক্তির কাছে মাথা না নোয়ানোর দৃঢ় অঙ্গীকার করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির। মহানগর অফিস সম্পাদক কামরুল আহসান হাসানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও মুহাম্মদ শামছুর রহমান, মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শরিফুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতারা। অনুষ্ঠানে মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
সিএ/এএ


