আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-কে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে প্রশিক্ষণসহ যেসব প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি, তা এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস : কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রদান এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। আনুমানিক ৪৫ দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে বিজিবিকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার ক্ষেত্রে বিজিবির বড় দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্ব বিজিবি পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাতিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিজিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির সাহস ও আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। পাশাপাশি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী সব শহীদ এবং আন্দোলনে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র-জনতার অবদানের কথাও স্মরণ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিজিবি একটি সুদীর্ঘ ও গৌরবময় ঐতিহ্যের বাহিনী। বর্তমানে বিজিবি একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সীমান্ত সুরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা এবং জনকল্যাণমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজিবির উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সীমান্ত দিয়ে কোনো ধরনের মাদক প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না এবং স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে কোনো পণ্য বিদেশে পাচারের সুযোগ দেওয়া যাবে না।
মাদক ও চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি চোরাকারবারি বা মাদক পাচারকারীদের সহায়তা করে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, অধীন কমান্ড ও ট্রুপসদের কল্যাণের বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। ডিসিপ্লিন, ট্রেনিং ও ওয়েলফেয়ার—এই তিনটি বিষয় সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। ট্রেনিং ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কোনো আপস করা যাবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত ব্যবহারকারী অপরাধী ও চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যাতে সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেন তিনি।
বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন, চেইন অব কমান্ডের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রেখে সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে গৌরবময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সিএ/জেএইচ


