সাবেক মুখ্য সচিব, বিশিষ্ট প্রশাসক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ড. কামাল সিদ্দিকী ছিলেন প্রশাসন, উন্নয়নচিন্তা ও একাডেমিক গবেষণার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি একজন সৎ, দূরদর্শী ও নিষ্ঠাবান সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আধুনিকায়নের জন্য অবদান রেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও নীতিনির্ধারক হিসেবে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ড. কামাল সিদ্দিকীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। তারা প্রায়ই দেশের ভবিষ্যৎ, প্রশাসনিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি ছিলেন নীতিবান, বিনয়ী ও দেশপ্রেমিক। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন প্রিয় বন্ধু ও প্রজ্ঞাবান সহযাত্রীকে হারানোর শোক অনুভব করছেন।
শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়, দেশের বৈরি ও প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ড. সিদ্দিকী বহুবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং অন্যায়ভাবে একাধিক মামলার হয়রানি সহ্য করতে হয়। তবুও তিনি কখনও তার মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম থেকে সরে আসেননি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ড. সিদ্দিকী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কিংবদন্তি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি যে সততা, নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য অনুসরণীয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে বিএসসি ও এমএসসি অর্জন করার পর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। তার জ্ঞানস্পৃহা ছিল অদম্য।
ড. কামাল সিদ্দিকী অসংখ্য গবেষণাভিত্তিক বই লিখে তার পাণ্ডিত্যের পরিচয় রেখেছেন। তার তিন খণ্ডের আত্মজীবনী বাংলাদেশের সমাজ, মানুষ ও রাষ্ট্র ও সরকারের একটি আন্তরিক ও অকপট দলিল হিসেবে বিবেচিত। বিভিন্ন গবেষণা গ্রন্থে তিনি তার কৌতূহলী মনের সক্রিয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন।
ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটির সদস্য হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (এসওএএস) থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
সিএ/এমআরএফ


