জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্টের মধ্যেই ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ কার্যকর করার সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত আইন প্রণয়ন কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। এই সময়ে গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যদি সংবিধান সংস্কার পরিষদ ব্যর্থ হয়, তবে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।
সুপারিশ অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে জুলাই সনদ বিষয়ে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর জনগণের মতামত নেওয়া হবে। সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ নামে একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করবে। গণভোটে ব্যালটে একটিমাত্র প্রশ্ন থাকবে— ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ এবং তফসিল-১ অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংস্কারের খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহের প্রতি সম্মতি জানাচ্ছেন?’
সুপারিশে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদে কোরামের জন্য অন্তত ৬০ জন সদস্যের উপস্থিতি আবশ্যক। পরিষদ সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নেবে। সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। এই উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
পরামর্শে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিফলন হিসেবে কাজ করবে। তাই সংবিধান সংস্কারের জন্য আর কোনো আলাদা ভোট বা অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর নোট অব ডিসেন্ট ও মতবিরোধের বিষয়গুলো জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘হ্যাঁ’ ভোট পেলে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তবে যদি ‘না’ ভোট বেশি হয়, তবে সংস্কার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো সময় গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। সময় নির্ধারণের দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যৌথ সিদ্ধান্তে নির্ধারিত হবে। কমিশনের হাতে দুটি বিকল্প প্রস্তাব রয়েছে— সরকার একটি আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করবে অথবা তফসিলে অন্তর্ভুক্ত ৪৮টি বিষয় বিল আকারে জনগণের কাছে উপস্থাপন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। কমিশন উল্লেখ করেছে, যেসব প্রস্তাব অধ্যাদেশ বা অফিস অর্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য, সরকারকে সেগুলো দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিএ/এমআর


