Home বাংলাদেশ জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সিদ্ধান্ত যখন শ্রেষ্ঠ!

শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সিদ্ধান্ত যখন শ্রেষ্ঠ!

0

ইভান পাল||

শিক্ষক সবসময়ের জন্য ই শ্রেষ্ট ব্যক্তি। বলা হয়ে থাকে, মা বাবার পরেই প্রতিটা মানুষের জীবনেই নাকি এই শিক্ষকের স্থান। আর একজন শিক্ষকের সিদ্ধান্ত কখনোই খারাপ হতে পারে না। তিনি তারঁ সমস্ত জ্ঞান আর বুদ্ধিমত্তা থেকেই জীবনের জন্য সর্বদাই যোগ্য সিদ্ধান্ত ই গ্রহণ করে থাকেন।

ঠিক তাই, যোগ্য সিদ্ধান্ত ই গ্রহণ করেছিলেন— কক্সবাজারের রামু উপজেলাধীন ঈদগড় হাসনাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু সাধন পাল(৮০)।
গত ২৮ আগস্ট মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩ টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আর সরকারের নিকট থেকে শ্রেষ্ট শিক্ষকের সন্মান পাওয়া এই শিক্ষক, মৃত্যুর পর নিজের এ নিথর দেহ দান করে শ্রেষ্ট সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।

মেডিকেলের শিক্ষার্থী যারা ডাক্তারি পড়ছেন তাদের মানবদেহ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে কিন্তু এই মানব কঙ্কাল অবশ্যই একটি অতি প্রয়োজনীয় অংশ।

তো, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাধন পাল নি:সন্দেহে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ই নিয়েছিলেন। কারণ, তার এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা ডাক্তারি পড়ছেন কিংবা ভবিষ্যতে ডাক্তার হবেন তারা কিন্তু তার এই নিথর দেহ টি নিয়ে হাতে কলমে কাজ করতে পারবেন। তারা তাদের গবেষণা কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় বলা চলে।

তারঁ সন্তানরা হচ্ছেন- কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ও বিএমএ কক্সবাজার জেলা শাখার সহ-সভাপতি ডা: বিধান পাল, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরি পাল, এনজিও কর্মকর্তা ও সাংবাদিক নির্বান পাল।।

আর তার স্ত্রী কল্পনা রানী পাল ও পেশাগত জীবনে একজন শিক্ষিকা ছিলেন।

ডাক্তারি পড়ার প্রাক্কালে নাকি একবার ডাক্তার বিধান বাড়িতে এসে তারঁ বাবাকে বলেছিলেন, “বাবা আমার একটা মানব কঙ্কাল লাগবে। কিন্তু সে সময় এই মানব কঙ্কালের অনেক দাম ছিলো।”
তখন, সামান্য বেতনের শিক্ষক তারঁ বাবা সাধন পাল নাকি তাকেঁ বলেছিলেন, “আমার যে এত টাকা নেই। তুই কোন সহপাঠির সাহায্য নিয়ে মানবদেহ সম্বন্ধে জেনে নে। পরে তা আমি পুষিয়ে দেব। মৃত্যুর পর আমার দেহ মেডিকেল কলেজে দান করবো। তো তারঁ সেই কথা, সেই অঙ্গীকার থেকেই নাকি তিনি তারঁ এই দেহ লিখিতভাবে মরণোওর দান করে যান।”

আর এই কথাগুলো বলতে গিয়ে ভীষণভাবে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন সাধন পালের ই জ্যেষ্ঠ পুত্র কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ডাঃ বিধান পাল।

সাধন পালের শেষ ইচ্ছানুযায়ী গত ২৯ আগষ্ট দুপুরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহটি দান করেন। আর মৃতদেহটি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে গ্রহণ করেন প্রফেসর ডা: মায়েনু।

আর এসময় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক,সকল চিকিৎসকবৃন্দ, নার্স ও স্টাফরা উপস্থিত ছিলেন।

আমরা হয়তো আমাদের দেশের ই সাহিত্য জগতের একজন বিখ্যাত ভাষাবিদ, খ্যাতনামা মনীষীর কথা জানি। ড. আহমদ শরীফ স্যার। তিনি ও কিন্তু মৃত্যুর পর তারঁ দেহ দান করে গিয়েছিলেন।
আর তিনি তারঁ সেই দেহদান সম্পর্কিত উইলটিতে লিখেছিলেন ‘চক্ষু শ্রেষ্ঠ প্রত্যঙ্গ, আর রক্ত হচ্ছে প্রাণ প্রতীক, কাজেই গোটা অঙ্গ কবরের কীটের খাদ্য হওয়ার চেয়ে মানুষের কাজে লাগাইতো বাঞ্ছনীয়’।

মৃত্যুর পর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো মহৎকাজে দেহদান করা সত্যি এক বিরাট অবদান। কেননা, যারা ভবিষ্যৎ চিকিৎসক তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো এই মানবদেহ। আর তারা এই নিথর দেহ নিয়ে অনেক অনেক গবেষণা করতে পারবে।।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারে সাধন পাল ই প্রথম ব্যক্তি যিনি তারঁ দেহ দান করার মতো মহৎ কাজ করে গেছেন ।।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version